আফ্রিকার বুরকিনা ফাসোর অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট ক্যাপ্টেন ইব্রাহিম ত্রাওরে সৌদি আরবের দেওয়া ২০০টি মসজিদ নির্মাণের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।
ইব্রাহিম ত্রাওরের মতে, দেশটির জনগণের জন্য এর চেয়ে আরও প্রয়োজনীয় প্রকল্পে বিনিয়োগ করা উচিত। সৌদি আরবের এই প্রস্তাবের বদলে, তিনি সৌদি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তারা দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মতো প্রকল্পে বিনিয়োগ করে।
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) সংবাদমাধ্যম এক্সট্রা আফ্রিকা ডট কমের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
ইব্রাহিম ত্রাওরে বলেন, বুরকিনা ফাসোতে ইতোমধ্যেই পর্যাপ্ত মসজিদ রয়েছে, এমনকি বেশ কিছু মসজিদ তো প্রায় পুরোপুরি অকার্যকর। এই বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে, ত্রাওরে নিশ্চিত করেছেন যে, দেশের জাতীয় উন্নয়নকে সামনে রেখে তার অগ্রাধিকার হবে জনগণের জন্য কার্যকর ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলা।
প্রসঙ্গত, প্রেসিডেন্ট ত্রাওরে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশটির অবকাঠামো উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তার লক্ষ্য শুধু দেশকে পুনর্গঠন করা নয়, বরং মানুষের জীবনযাত্রার মানও উন্নত করা। তিনি বুরকিনা ফাসোর বর্তমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের বিভিন্ন বিভাগে সংস্কার চালু করেছেন।
এর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হলো আবাসন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম পুনর্গঠন, যেখানে এখন পরিকল্পনা থেকে শুরু করে নির্মাণ পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা হয়, যাতে সুরক্ষা, পরিবেশ এবং প্রযুক্তিগত মান বজায় থাকে।
এছাড়া, ত্রাওরেকে গৃহহীনতার সমস্যা মোকাবিলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা গেছে। ২০২৪ সালের ১২ জুলাই, তিনি ১ হাজারটি সামাজিক আবাসন ইউনিট নির্মাণের একটি প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন। তার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে বুরকিনা ফাসোর সব নাগরিকের জন্য উপযুক্ত বাসস্থান নিশ্চিত করা হবে।
এছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়নেও ইব্রাহিমের দৃষ্টি পরিষ্কার। তিনি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে আর্থিক সহায়তা গ্রহণ না করে, দেশটির নিজস্ব সম্পদ ব্যবহারের পক্ষে। এর ফলে, তিনি দেশে দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক স্বনির্ভরতা গড়ার পথে পদক্ষেপ নিয়েছেন। কৃষি, স্থানীয় শিল্প এবং টেকসই উন্নয়নকে তিনি গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে বিবেচনা করেন, যার মাধ্যমে দেশের শক্তিশালী অর্থনীতি গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
ইব্রাহিম ত্রাওরে বিশ্বাস করেন যে, বুরকিনা ফাসোর উন্নয়ন শুধু সরকারি সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল হতে পারে না। দেশের নিজস্ব শক্তি ও সম্পদ ব্যবহার করে, প্রতিটি সেক্টরে উন্নতি সাধন করা সম্ভব, যা দেশের মানুষের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতির শক্তি বৃদ্ধি করবে।
এদিকে সৌদি আরবের প্রস্তাবিত মসজিদ নির্মাণ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে, ত্রাওরে একধরনের সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন, যা তার দৃঢ় জাতীয় অগ্রগতি পরিকল্পনার প্রতিফলন। তিনি এর মাধ্যমে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন যে, বুরকিনা ফাসো এমন প্রকল্পের প্রতি আগ্রহী নয়, যা জাতির প্রকৃত উন্নতির জন্য অপরিহার্য নয়।
প্রথাগত সৌদি আরবের মসজিদ নির্মাণের প্রস্তাব যখন দেশের অন্য অনেক নেতা গ্রহণ করতেন, তখন ইব্রাহিম ত্রাওরের এই সিদ্ধান্ত তাকে একজন বিচক্ষণ এবং সমালোচনামূলক নেতা হিসেবে পরিচিতি দিয়েছে।
ইব্রাহিম ত্রাওরের দৃষ্টি এখন সম্পূর্ণভাবে বুরকিনা ফাসোর ভবিষ্যৎ উন্নয়ন এবং দেশের জনগণের কল্যাণের দিকে নিবদ্ধ। তার শাসনামলে, সরকার জনগণের জীবনমান উন্নয়ন এবং দেশের সামগ্রিক অগ্রগতির জন্য বৃহত্তর অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। তিনি বিশ্বাস করেন যে, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মতো মৌলিক খাতগুলোই একটি দেশের উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
তবে, ইব্রাহিমের পদক্ষেপ এবং পরিকল্পনা শুধু তার দেশের উন্নতির দিকে নিবদ্ধ থাকলেও, বুরকিনা ফাসো এখনো কঠিন রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। দেশটির সন্ত্রাসবাদী ইসলামি গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে লড়াই এবং সামরিক সরকারের ভিতরে বিভক্তি দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য এক বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন রেখে দিয়েছে।
এর সঙ্গে, তার প্রশাসনের কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে বিরোধী মত দমন এবং বাক স্বাধীনতা খর্ব করার মতো অভিযোগও উঠেছে। এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ত্রাওরের পদক্ষেপগুলো আগামী কয়েক দশকে দেশটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ রূপান্তর আনতে পারে, যদি তিনি সফল হন।
মন্তব্য করুন