যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে লেবাননে ইসরায়েলি হামলার পর প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে সাতজনে পৌঁছেছে। গত বছরের ২৭ নভেম্বর ঘোষিত যুদ্ধবিরতির পর এটি ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ইসরায়েলের হামলায় লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাওয়াফ সালাম এই পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং সতর্ক করেছেন যে, লেবানন নতুন একটি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে।
রোববার (২৩ মার্চ) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার (২২ মার্চ) ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ লেবাননে ইরান সমর্থিত গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দফায় বিমান হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এই হামলাগুলো গত বছরের যুদ্ধবিরতির পর থেকে সবচেয়ে বড় হামলা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে লেবাননের সরকারি সংবাদ সংস্থা ‘ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি’ জানিয়েছে, হামলায় দক্ষিণের টুলাইন শহরে দুটি শিশুসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন। আরও একটি হামলায় দক্ষিণ লেবাননের উপকূলীয় শহর টাইর-এ একজন নিহত হন এবং আরেকটি হামলায় টাইরের দক্ষিণ-পূর্বে ক্বলাইলাহ শহরে চারজন আহত হন।
লেবাননে হামলা নিয়ে ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা এই হামলাগুলো হিজবুল্লাহর লক্ষ্যবস্তুতে চালিয়েছে, কিন্তু হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী এই হামলায় নিজেদের কোনো সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেছে। তারা জানিয়েছে, ইসরায়েল তাদের বিরুদ্ধে হামলার অজুহাত খুঁজছে এবং তারা নভেম্বরে সই হওয়া যুদ্ধবিরতির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তবে এ বিষয়ে লেবাননের রাজনৈতিক বিরোধীরা হিজবুল্লাহকে দায়ী করছে, তাদের মতে হিজবুল্লাহ গাজা যুদ্ধের সমর্থন দিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলার উত্তেজনা উসকে দিয়েছে।
লেবাননের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মিশেল মেনাসা বলেছেন, লেবাননের সেনারা হামলার পেছনের কারণ খতিয়ে দেখছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ইসরায়েলের হামলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাওয়াফ সালাম ইসরায়েলের এই সামরিক অভিযানকে লেবানন এবং তার জনগণের জন্য ক্ষতিকর বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, লেবানন যদি যুদ্ধের বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়, তবে দেশ তার সব নিরাপত্তা এবং সামরিক ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত থাকবে।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর (ইউএনআইএফআইএল) মুখপাত্র আন্দ্রেয়া টিনেন্টি পরিস্থিতি ‘খুব উদ্বেগজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন এবং সব পক্ষকে সংযম বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
এমন পরিস্থিতিতে লেবাননে গাজা যুদ্ধের প্রভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। গাজা থেকে ইসরায়েলে রকেট হামলা চালানো হয়েছিল, যার ফলস্বরূপ এই উত্তেজনা আরও বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি ইসরায়েলের আগ্রাসন অব্যাহত থাকে, তবে লেবানন, ইসরায়েল এবং হিজবুল্লাহর মধ্যে সংঘর্ষ আরও তীব্র হতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলেন, যতদিন ইসরায়েলের আগ্রাসন চলবে, ততদিন হিজবুল্লাহ ও অন্যান্য প্রতিরোধ গোষ্ঠী তাদের লড়াই চালিয়ে যাবে, যা লেবাননসহ ও পুরো অঞ্চলকে নতুন এক সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
মন্তব্য করুন