মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের বিপর্যয়ের পর নতুন ছক কষছে ইরান। তেহরান তাদের কৌশলের অংশ হিসেবে এবার ইরাককে ভেঙে টুকরো টুকরো করতে চায়। ইরাককে কয়েকটি স্বায়ত্তশাসিক অঞ্চলে ভাগ করে ফেলা, এমনকি ভেঙে আলাদা কয়েকটি রাষ্ট্র করার বিষয়টিও সামনে এসেছে। মূলত ইরাকের শাসকশ্রেণির অভিজাতদের মধ্যে যে বিবাদ, সে সূত্র ধরেই আলোচনাটি প্রকাশ্যে আসছে।
ইরাকি বিশ্লেষক আবদুল লতিফ আল-সাদুনের একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে মিডল ইস্ট মনিটর। সেখানে তিনি বলেন, ইরাকে লাইম লাইটে আছে শিয়া, সুন্নি এবং কুর্দিরা। তবে দেশ বিভক্ত করার দাবিটি এসেছে শিয়া কো-অর্ডিনেশন ফ্রেমওয়ার্ক পৃষ্ঠপোষক এবং দাওয়া পার্টির নেতা নুরি আল-মালিকির কাছ থেকে।
আল-সাদুনের মতে, ইরাক ভেঙে টুকরো টুকরো করার এই পরিকল্পনার সঙ্গে সাধারণ ইরাকি নাগরিকদের স্বার্থের কোনো সংযোগ নেই। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমরা যে বক্তব্য লক্ষ করেছি তার বেশিরভাগই বহিরাগত শক্তি, বিশেষ করে ইরান দ্বারা অনুপ্রাণিত। ইরানের সাম্রাজ্যবাদী প্রকল্প এবং প্রতিরোধ অক্ষের পরাজয়ের সঙ্গে জড়িত। একইসঙ্গে এটি এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক ভিত্তির জন্য ক্ষতিকর।
প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়, ইরাক বিভক্ত করে ফেলতে শিয়াদের বাধ্য করা হতে পারে। বাস্তবতা হলো, শিয়ারা এখন ইরাকের শাসক দল। তাহলে কারা তাদের বাধ্য করবে? নুরি আল-মালিকির এই দাবি যে ইঙ্গিতকে সামনে নিয়ে আসছে সেটা হলো, তেলের ওপর শিয়ারা একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এটিকে তিনি শিয়াদের অধিকার বলে দাবি করেছেন।
আল-মালিকির কাছ থেকে এই দাবি আসার পরপরই শিয়া কো-অর্ডিনেশন ফ্রেমওয়ার্ক একই সুরে সুর মেলাতে শুরু করেছে। এই দাবির প্রতি সমর্থন জানাতে তারা প্রাণান্ত চেষ্টা শুরু করে। ফলে এটা স্পষ্ট যে, ইরাক ভাঙার একটা পরিকল্পনা নিয়ে তারা এগোচ্ছেন।
এদিকে ইরাকের পার্লামেন্টে ক্ষমতাসীন শিয়া জোটের একজন নেতা বলেছেন, ‘অন্য সম্প্রদায়ের মানুষরা শিয়াদের ব্ল্যাকমেল করছে।’ তার এই বক্তব্য ‘নয় প্রদেশজুড়ে শিয়াদের স্বাধীন রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠার দাবিকেই সামনে আনার ইঙ্গিত বলে দাবি করেছেন আবদুল লতিফ আল-সাদুন।
শিয়া ফ্রেমওয়ার্কের আরেক সদস্য ‘আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের’ আহ্বান জানিয়েছেন। এই বক্তব্য ‘শিয়া রিপাবলিক অব ইরাক’ প্রতিষ্ঠার জন্য গণভোটের সম্ভাবনা সামনে নিয়ে আসার ইঙ্গিত। এতে কুর্দি ও সুন্নি- প্রত্যেকের মধ্যে নিজেদের আলাদা রাষ্ট্র করার ইচ্ছা জাগবে। প্রত্যেকেই তাদের নিজেদের মতো করে নতুন মাতৃভূমি প্রতিষ্ঠা করতে চাইবে।
আবদুল লতিফ আল-সাদুন তার নিবন্ধে আরও উল্লেখ করেছেন, শিয়া ফ্রেমওয়ার্কের এসব বক্তব্যের বেশির ভাগ একটি সুসংগঠিত প্রচারাভিযানের অংশ। এটি ইরাককে বিভক্ত করার ধারণাটিকেই সামনে এগিয়ে আনছে। মূলত এটি বাইরের খেলোয়াড়দের দ্বারা অনুপ্রাণিত একটি প্রচারাভিযান। আর শিয়াদের সেই শক্তি হলো ইরান।
প্রতিরোধের অক্ষ ভেঙে যাওয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে ভূরাজনৈতিক ভিত্তি হারানোর পর ইরান এখন ইরাক নিয়ে মরিয়া। ইরাকের ৯টি প্রদেশ দিয়ে শিয়া অঞ্চল গঠন করার কথা বলা হচ্ছে। সেটা যদি বাস্তবে রূপ পায়, তাহলে এটা হবে ইরানের ভূরাজনীতিতে ইরাককে সরাসরি অন্তর্ভুক্ত করার প্রথম বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ। ইরাকের বর্তমান ক্ষমতাসীন শিয়া গোষ্ঠীর মাধ্যমে ইরাককে ভাগ করার ক্রমবর্ধমান দাবির পেছনের মূলত কারণ এটি।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত ইরাককে তার পক্ষে রাখার জন্য ৩ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে, তাদের হাজার হাজার সেনা নিহত হয়েছেন। ইরান যদি ইরাককে টুকরো করার মিশন আরও জোরদার করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সঙ্গে তেহরানের প্রক্সিযুদ্ধ আরও ভয়ংকর রূপ ধারণ করবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
মন্তব্য করুন