ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল একাধিক ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়ে যুদ্ধবিরতি ভেঙে দিয়েছে। যার ফলে উপত্যকার পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠেছে এ মুহূর্তে। এই হামলাগুলোর ফলে গাজায় মৃতের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে এবং মানবিক সংকট গভীরতর হচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে, গাজায় দ্রুত যুদ্ধবিরতি চুক্তি ফেরানোর জন্য এবং মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার জন্য ইসরায়েলের প্রতি এ আহ্বান প্রকাশ করেছে জার্মানি, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্য।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (২১ মার্চ) বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনে ইউরোপের ৩টি দেশ এক যৌথ বিবৃতিতে এ আহ্বান জানায়।
এই বিবৃতিতে তারা গাজার মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ইসরায়েলের কাছে পানি, বিদ্যুৎসহ মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছে। তাছাড়া, গাজার মানুষদের চিকিৎসাসেবা এবং চিকিৎসার জন্য স্থানান্তরের সুযোগ নিশ্চিত করতে তারা ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের সঙ্গে সম্মতভাবে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছে।
তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা গাজার বেসামরিক মানুষের প্রাণহানিতে গভীর দুঃখপ্রকাশ করেছেন। তারা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসকে আহ্বান জানিয়েছেন যেন তারা ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেয়। তাদের মতে, ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যকার সমস্যার সামরিক সমাধান সম্ভব নয় এবং একটি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করাই শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায়।
এছাড়া, তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা গাজার জাতিসংঘ প্রকল্প পরিষেবা কার্যালয়ে (ইউএনওপিএস) হামলার ঘটনায় নিজেদের গভীর উদ্বেগ এবং মর্মাহত হওয়ার কথা জানিয়েছেন এবং এ ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।
এর আগে মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ইসরায়েল গাজার যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে আকাশ ও স্থলপথে আক্রমণ শুরু করে, যা চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির অবসান ঘটায়।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৯,৬১৭ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১,১২,৯৫০ জনেরও বেশি। অন্যদিকে, গাজার সরকারি প্রচার মাধ্যম দাবি করেছে, নিহতের সংখ্যা ৬১,৭০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে, কারণ ধ্বংসস্তূপের নিচে বহু মানুষ চাপা পড়ে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া নতুন আক্রমণে ৬০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলের বিমান হামলা ও স্থল অভিযান তীব্র হয়ে উঠেছে এবং মৃতের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা গাজার দক্ষিণ রাফাহ শহরে স্থল অভিযান শুরু করেছে এবং বেইত লাহিয়া ও গাজার মধ্যাঞ্চলে তাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছে, যার ফলে মানবিক সংকট আরও তীব্র হয়েছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর, ১,১৩৯ জন নিহত হন এবং ২০০ এরও বেশি ইসরায়েলি গাজায় আটক হন। এর প্রতিক্রিয়ায়, ইসরায়েল ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে, যা ভয়াবহ প্রাণহানি এবং মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে।
বিশ্বব্যাপী শিশুদের ব্যাপক হতাহতের ঘটনায় গভীর নিন্দা প্রকাশ করা হচ্ছে এবং ইউনিসেফসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো গাজার যুদ্ধ বন্ধ করে দ্রুত মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছে।
মন্তব্য করুন