ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যে দেশটির হামলায় ছয় শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলের এ হামলার মধ্যে একটি আজানের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যা পুরো মুসলিম বিবেকে নাড়া দিয়েছে।
গত মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ইসরায়েল গাজায় সেহরির সময় হামলা চালায়। গাজায় হামলা শুরুর আগে বেশিরভাগ মানুষ রমজানের সেহরি খাচ্ছিলেন, তখনই বিস্ফোরণ শুরু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ২০টিরও বেশি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান গাজার আকাশে উড়ছিল এবং সেগুলো গাজা সিটি, রাফাহ ও খান ইউনিসে লক্ষ্যবস্তুতে বোমা ফেলছিল।
গাজায় ইসরায়েলের হামলার মধ্যে এদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আজানের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার ইউটিউব চ্যানেল থেকেও ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছে।
ভিডিওতে মুয়াজ্জিনকে কাঁদো কাঁদো গলায় আজান শেষ করতে শোনা যায়। হামলার পর এমন স্বর অনেকের হৃদয়ে নাড়া দেয়। আজানের ভিডিওটি অনেকে শেয়ার দিয়ে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের গণহত্যার বিরুদ্ধে নানা ক্ষোভ ও গাজাবাসীর প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
এদিকে গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় ছয় শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ নারী ও শিশু রয়েছেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, মঙ্গলবার অস্ত্রবিরতি ভঙ্গের পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ৫৯০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ক্রমাগত বিমান হামলা ও স্থল অভিযানের কারণে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, হামাস ইসরায়েলের দিকে প্রথমবারের মতো রকেট হামলা চালিয়েছে। এটি যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের পর হামাসের প্রথম পাল্টা পদক্ষেপ। এ ছাড়া ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা জানায়, তারা তেলআবিবের দক্ষিণে অবস্থিত একটি সামরিক স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।
গাজায় হামলার পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজা উপত্যকায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েল পূর্ণশক্তিতে যুদ্ধ শুরু করেছে। এ তো কেবল শুরু। মঙ্গলবার এক ভিডিও বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ আগেই এ হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারা বলেছেন, হামাসের কাছ থেকে বন্দিদের মুক্তির দাবি এবং পূর্বে প্রস্তাবিত চুক্তি প্রত্যাখ্যানের পর ইসরায়েল এই হামলা চালিয়েছে। ভবিষ্যতে হামাসের বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী সামরিক পদক্ষেপ নেবে তারা।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত সেখানে ৪৯ হাজার ৬১৭ ফিলিস্তিনি নিহত ও ১ লাখ ১২ হাজার ৯৫০ জন আহত হয়েছে। গাজার সরকারি গণমাধ্যম অফিস জানিয়েছে, নতুন পরিসংখ্যান অনুযায়ী নিহতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০ ছাড়িয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও হাজারো মানুষ আটকা পড়ে আছে, যাদের বেশিরভাগেরই বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই।
মন্তব্য করুন