ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজার বাসিন্দাদের সিরিয়ায় পুনর্বাসনের বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
সোমবার (১৭ মার্চ) টাইমস অব ইসরায়েলে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে তিনটি সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, ইসরায়েল গোপনে একটি বিতর্কিত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করছে। এই পরিকল্পনার আওতায় গাজার ২০ লাখের বেশি বাসিন্দাকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজাকে মার্কিন প্রশাসনের আওতায় নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পুনর্গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। তার পরিকল্পনায় অঞ্চলটিকে একটি রিয়েল এস্টেট প্রকল্প হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। তবে বিশ্লেষকরা এই পরিকল্পনাকে অবাস্তব মনে করছেন এবং মার্কিন মিত্র আরব দেশগুলোও গাজাবাসীর বাস্তুচ্যুতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হোয়াইট হাউস সিরিয়ার নতুন সরকারের সঙ্গে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে আলোচনা করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের একটি সূত্র সিবিএস নিউজকে জানিয়েছে, দামেস্ককে এই পরিকল্পনার বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। তবে সিরিয়ার এক শীর্ষ কর্মকর্তা দাবি করেছেন, এ বিষয়ে তারা কোনো আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ পাননি।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ইসরায়েলি নেতারা সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার ওপর আস্থা রাখেন না। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর আহমেদ আল-শারা সিরিয়ার শাসনক্ষমতা গ্রহণ করেন। তবে তার সরকার সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোনো হুমকি দেয়নি।
জাতিসংঘের ২০১৭ সালের হিসাব অনুযায়ী, ইতোমধ্যে সিরিয়ায় সাড়ে চার লাখের বেশি ফিলিস্তিনি শরণার্থী বসবাস করছে।
একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা টাইমস অব ইসরায়েলকে জানিয়েছেন, পুনর্বাসনের বিষয়ে মূল আলোচনা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেই এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তবে কোন কোন দেশকে এ বিষয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তা তিনি প্রকাশ করেননি।
সোমালিয়ার মার্কিন রাষ্ট্রদূত সিবিএস নিউজকে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েল সোমালিয়ার সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো যোগাযোগ করেনি। তবে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সোমালিল্যান্ডের সঙ্গেও আলোচনা করেছে, যা সোমালিল্যান্ড কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে প্রত্যাখ্যান করেছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে ইসরায়েলে হামলার পর শুরু হয় ১৫ মাসব্যাপী যুদ্ধ। এই হামলায় ১,২০০ ইসরায়েলি নিহত এবং ২৫১ জন অপহৃত হয়। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় ব্যাপক হামলা চালায়, যাতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৯ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
গাজায় চলমান ধ্বংসযজ্ঞের কারণে অঞ্চলটির পুনর্গঠনের একটি বিস্তৃত পরিকল্পনার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। তবে ইসরায়েলের দাবি, যে কোনো পুনর্গঠন পরিকল্পনার শর্ত হিসেবে গাজায় হামাসের শাসনের অবসান ঘটাতে হবে।
আরব দেশগুলো ট্রাম্পের বিতর্কিত ‘মিডল ইস্ট রিভিয়েরা’ পরিকল্পনার বিকল্প হিসেবে একটি পৃথক প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের প্রস্তাবে গাজাবাসীদের অন্যত্র সরিয়ে না নিয়ে স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের পরিচালনায় ছয় মাসের জন্য একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনের কথা বলা হয়েছে, যা পরবর্তীতে গাজার নিয়ন্ত্রণ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করবে।
এদিকে, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে তিন ধাপের যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী প্রথম ধাপে বন্দি বিনিময় হলেও দ্বিতীয় ধাপে গিয়ে তা স্থগিত হয়ে আছে। ইসরায়েল ও হামাস পরস্পরের বিরুদ্ধে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলছে।
এরই মধ্যে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ভোররাতে সেহরির সময় ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে গাজার একাধিক স্থানে ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে। এতে এখন পর্যন্ত ৪১৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
যদিও যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল গাজাবাসীদের অন্যত্র পুনর্বাসনের পরিকল্পনা করছে, তবে হামাস স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, গাজার বাসিন্দারা ফিলিস্তিন ছাড়বে না। বিশ্ব সম্প্রদায়ের নজর এখন এই ইস্যুর দিকে, তবে গাজাবাসীর ভবিষ্যৎ কী হবে, তা সময়ই বলে দেবে।
মন্তব্য করুন