মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংকটের মধ্যে ইসরায়েল মার্কিন সমর্থন নিয়ে ইরানে হামলার হুমকি দিয়ে আসছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীদের পক্ষ থেকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার বিষয়ে একাধিকবার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। দেশটির গণমাধ্যমগুলোও এ বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে, যা ইরানের বিরুদ্ধে জনমত তৈরির প্রচেষ্টা বলে মনে করা হচ্ছে।
সম্প্রতি গাজা যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালাতে পারে। এই তথ্য প্রকাশের পর পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে উদ্বেগ আরও বেড়েছে। কারণ, এই অঞ্চলে এমন হামলা হলে মারাত্মক পরিবেশগত সংকট সৃষ্টি হতে পারে।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় সম্ভাব্য হামলা নিয়ে সতর্ক করেছেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান বিন জসিম আল থানি। তিনি বলেছেন, এ ধরনের হামলা হলে কাতারসহ পারস্য উপসাগরের দেশগুলো মাত্র তিন দিনের মধ্যে ভয়াবহ পানি সংকটে পড়বে।
শনিবার (৮ মার্চ) সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, শুক্রবার (৭ মার্চ) মার্কিন রাজনৈতিক ভাষ্যকার ও উপস্থাপক টাকার কার্লসনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, দক্ষিণ ইরানের বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে হামলা হলে ইরান ও কাতারের মধ্যবর্তী পানির কী হবে? এতে উচ্চমাত্রার পানিদূষণ হবে এবং পুরো অঞ্চলে পরিবেশগত বিপর্যয় ডেকে আনবে। তিন দিনের মধ্যেই কাতারে তীব্র পানি সংকট দেখা দেবে।
শেখ মোহাম্মদ আল থানি আরও বলেন, এটি শুধু কাতারের জন্য নয়, বরং কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ পারস্য উপসাগরীয় সব দেশকেই প্রভাবিত করবে।
কাতারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, মতপার্থক্য থাকলেও ইরানের সঙ্গে কাতারের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, আমরা ১৪ বছর ধরে সিরিয়ায় ইরানের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি, কিন্তু তারপরও উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ক বজায় আছে।
তিনি জানান, এক মার্কিন কংগ্রেসম্যান কাতারকে ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে তিনি সেই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে মার্কিনদের সামনে একটি মানচিত্র এঁকে দেখান, যাতে বোঝানো হয় কাতার ও ইরান ভৌগোলিকভাবে কতটা কাছাকাছি। ফলে এই দুই দেশের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব নয়।
এদিকে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি সম্প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা হলে তা পুরো অঞ্চলের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে। তিনি বলেন, আমার ধারণা, এমন কোনো হামলা হলে আমরা ব্যাপক যুদ্ধের মধ্যে জড়িয়ে পড়ব, যা এই অঞ্চলের কেউই চায় না।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরানে হামলার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে ভয়াবহ অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হতে পারে, যা বৈশ্বিক শক্তির ভারসাম্যও বদলে দিতে পারে।
মন্তব্য করুন