আফগানিস্তানে তালেবান শাসনের পুনঃপ্রতিষ্ঠা পরবর্তী সময়ে, ৮০ জনেরও বেশি আফগান নারী শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তা এবং শিক্ষা লাভের আশায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে আশ্রয় গ্রহণ করেন। তারা ইউএসএআইডি-অর্থায়িত উইমেনস স্কলারশিপ এন্ডাওমেন্ট (ডব্লিউএসই) প্রোগ্রামের মাধ্যমে ওমানে পড়াশোনা করছিলেন।
তবে সম্প্রতি, এই শিক্ষার্থীরা এমন এক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন, যেখানে তাদের বৃত্তি বাতিল করা হয়েছে এবং তারা দেশে ফেরত পাঠানোর হুমকির মুখে পড়েছেন। শনিবার (৮ মার্চ) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সপ্তাহে, আফগান নারী শিক্ষার্থীদের জানানো হয়, তাদের তহবিল বন্ধ হয়ে গেছে। এই সিদ্ধান্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সাহায্য বন্ধ করার পর কার্যকর হয়।
ফলে, ইউএসএআইডি সহায়তাধীন এ শিক্ষার্থীদের বৃত্তি বন্ধ হওয়ায় তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের তহবিল বন্ধ হওয়ায়, তারা ফের আফগানিস্তানে ফিরে যাওয়ার হুমকির মুখে রয়েছেন।
বিবিসি-কে এক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, এটি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। আমরা হতবাক, কান্নায় ভেঙে পড়েছি। আমাদের বলা হয়েছে, দুই সপ্তাহের মধ্যে দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
এটি এক কঠিন বাস্তবতার ফল, যেখানে আফগানিস্তানে তালেবান শাসনের অধীনে নারীদের জন্য শিক্ষা এবং চাকরির সুযোগ প্রায় পুরোপুরি সীমিত হয়ে গেছে। আফগান নারীরা যদি দেশে ফিরে যান, তবে তাদের সম্ভাব্য পরিণতি হবে ভয়াবহ, এমনটাই আশঙ্কা করছেন এই শিক্ষার্থীরা।
তাদের মতে, তালেবান শাসনের অধীনে আফগানিস্তানে ফিরে গেলে শুধু তাদের শিক্ষার স্বপ্ন ধ্বংস হবে না, বরং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়েও চরম ঝুঁকিতে পড়তে হবে।
এছাড়া, এই আফগান নারী শিক্ষার্থীরা মূলত এসটিইএম (স্টেম) বিষয়ক স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করছিলেন, যা তালেবান শাসনে নারীদের জন্য নিষিদ্ধ। তারা ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা দখল করার আগে বৃত্তি অর্জন করেছিলেন এবং ২০২৪ সালের অক্টোবর-নভেম্বরের দিকে ওমানে স্থানান্তরিত হন। এদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসএআইডি তহবিল বন্ধ হওয়ার সিদ্ধান্তটি বৈদেশিক সহায়তার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। এতে, হাজার হাজার মানবিক সহায়তা প্রকল্প বন্ধ বা স্থগিত হয়েছে। হোয়াইট হাউসের এক ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আন্না কেলি এই সিদ্ধান্তকে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ফল হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তিনি জানান, আফগান নারীরা সমস্যায় পড়েছেন কারণ জো বাইডেনের বিপর্যয়কর সেনা প্রত্যাহারের পর, তালেবান সরকার তাদের উপর আধিপত্য বিস্তার করেছে এবং মধ্যযুগীয় শরিয়া আইন প্রয়োগ করছে।
এছাড়া, ইলন মাস্ক নেতৃত্বাধীন ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি তহবিল বন্ধ করার এই প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়ন করছে।
পরিস্থিতি যখন এই তখন আফগান নারী শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে জরুরি সহায়তার আবেদন জানিয়েছেন। তারা নিরাপদ পুনর্বাসন এবং শিক্ষার সুযোগ অব্যাহত রাখার জন্য সহায়তা চাচ্ছেন।
একজন শিক্ষার্থী বিবিসিকে বলেন, যখন আমরা এখানে এসেছি, তখন বলা হয়েছিল যে ২০২৮ সালের আগে আফগানিস্তানে ফিরতে হবে না। কিন্তু এখন তারা আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাচ্ছে।
অপরদিকে আফগানিস্তানের তালেবান সরকার নারীদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের অধিকার নিয়ে কঠোর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। মানবাধিকার কর্মীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, তালেবান নারীদের গ্রেপ্তার, নির্যাতন এবং হুমকি প্রদান করছে।
এখন পর্যন্ত মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বা ইউএসএআইডি তাদের বৃত্তি বাতিল বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি এবং তাদের ওয়েবসাইটের মিডিয়া কন্টাক্ট পেজও অফলাইনে রয়েছে।
দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে, এই আফগান নারী শিক্ষার্থীরা এক অনিশ্চিত ও বিপজ্জনক ভবিষ্যতের মুখোমুখি। তাদের আশঙ্কা, যদি তহবিল বন্ধ হয়ে যায় এবং তাদের দেশে ফিরিয়ে দেওয়া হয়, তবে তাদের জীবনে নতুন একটি অধ্যায় শেষ হয়ে যাবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্রুত হস্তক্ষেপ তাদের জন্য আশার আলো হতে পারে।
মন্তব্য করুন