ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে ইসরায়েল। তবে, এ প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস।
শনিবার (০১ মার্চ) হামাসের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলের দেওয়া প্রস্তাব মেনে নেবে না এবং দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি নিয়ে এখনো কোনো আলোচনাও চলছে না। খবর রয়টার্স।
এদিকে, হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম আল আরাবিয়া টেলিভিশনকে বলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে নতুন করে কোনো আলোচনা হচ্ছে না।
এই বক্তব্যের মাধ্যমে হামাস পরিষ্কার করে জানিয়ে দেয়, তারা ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো ধরনের সমঝোতা বা আলোচনা করতে আগ্রহী নয়, বরং প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি চলে আসবে বলে তাদের বিশ্বাস।
প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি
গত ১৯ জানুয়ারি থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় এবং একই সঙ্গে বন্দিবিনিময় প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে ৪২ দিনে হামাস ৩৮ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে। পাল্টা হিসেবে ইসরায়েল প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে।
তবে, যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শেষ হওয়ার পর ১৬তম দিনেই দ্বিতীয় ধাপের জন্য আলোচনার কথা ছিল, যা চুক্তি অনুযায়ী শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে কোনো আলোচনা শুরু হয়নি, যা বর্তমান পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।
দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি
চুক্তি অনুযায়ী, দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনো সমঝোতা না হলে প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি চলতে থাকবে। তবে, দ্বিতীয় ধাপে যুদ্ধবিরতি সমঝোতা হলে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার কথা রয়েছে। বর্তমানে গাজায় ৫৯ জন ইসরায়েলি বন্দি রয়েছেন, যাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি জিম্মির জীবিত থাকার সম্ভাবনা নেই বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই মুক্তির বিনিময়ে ফিলিস্তিনিদের মুক্তি এবং গাজা, মিসর সীমান্তসহ অন্যান্য অঞ্চল থেকে ইসরায়েলি সেনাদের পুরোপুরি প্রত্যাহার করার শর্ত আছে। হামাস এই চুক্তির শর্তের প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলেছে, তারা ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তির বিনিময়ে ফিলিস্তিনিদের মুক্তি এবং সেনা প্রত্যাহারসহ একাধিক দাবি মেনে নিতে চায়।
চুক্তি ও যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ
বর্তমানে, গাজা উপত্যকার পরিস্থিতি অত্যন্ত অস্থির এবং সংকটপূর্ণ। প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি সফল হলেও, দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি নিয়ে এখনো কোনো সমঝোতা হয়নি। হামাসের এ সিদ্ধান্ত ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘর্ষের পথ আরও উন্মুক্ত করে দিয়েছে এবং এটি ভবিষ্যতে গাজার পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হতে পারে।
হামাসের তরফে যখন দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনো আলোচনা হচ্ছে না, তখন ইসরায়েলি সরকার তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। ইসরায়েল দাবি করছে, যুদ্ধবিরতি বজায় রাখতে এবং শান্তির জন্য তারা সম্ভাব্য সব উপায় অবলম্বন করবে, কিন্তু হামাসের এই অনীহা ইসরায়েলকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে প্ররোচিত করতে পারে।
এই অবস্থায়, গাজা অঞ্চলে মানবিক সংকটও চরম আকার ধারণ করেছে, যেখানে খাদ্য, ওষুধ এবং মৌলিক সহায়তার অভাব দেখা দিয়েছে। যুদ্ধবিরতি সফল হলে কিছুটা হলেও মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে, তবে যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ খুবই অনিশ্চিত।
এভাবে, যুদ্ধবিরতির পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে, যার উত্তর শুধুমাত্র পক্ষগুলো কীভাবে একে অপরকে সহযোগিতা বা আলোচনায় নিয়ে আসে তার ওপর নির্ভর করবে।
মন্তব্য করুন