অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনারা দুই ফিলিস্তিনি শিশুকে গুলি করে হত্যা করেছে। স্থানীয় সময় শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের হেবরন এবং জেনিন এলাকায় ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে দুই ফিলিস্তিনি শিশু নিহত হয়েছে।
এ ঘটনা ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ক্ষোভ এবং উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এবং ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১২ বছর বয়সী আয়মান নাসের আল-হায়মৌনি এবং ১৩ বছর বয়সী রিমাস আল-আমৌরি নিহত হয়েছে।
আল-হায়মৌনি হেবরনের দক্ষিণে একটি আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। সেখানে ইসরায়েলি সেনাদের গুলির শিকার হয় সে। তাকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নেওয়া হলেও চিকিৎসকরা বাঁচাতে পারেননি।
অন্যদিকে, রিমাস আল-আমৌরি তার বাড়ির আঙিনায় খেলতে থাকলে ইসরায়েলি সেনারা তাকে গুলি করে। দ্রুত তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দুই শিশুর মৃত্যু ঘটানোর পর এই হত্যাকাণ্ডের দায় ইসরায়েলি সেনারা স্বীকার করেছে। তবে ইসরায়েলি সেনারা দাবি করেছে, তারা আত্মরক্ষার্থে গুলি করেছে, কিন্তু তাদের দাবি সত্য নয়, কারণ ওই শিশুদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের হুমকি বা আক্রমণ ছিল না।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের একাধিক মানবাধিকার সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করেছে। ‘ডিফেন্স ফর চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনাল-প্যালেস্টাইন’ (ডিসিআইপি) নামক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা জানায়, ইসরায়েলি সেনারা কোনো পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই এই দুই শিশুকে পেছন থেকে গুলি করেছে। সংস্থার কর্মকর্তা আয়েদ আবু একতাইশ দাবি করেছেন, সেনারা তাদের আর্মাড কারের নিরাপত্তার আড়াল থেকে শিশুদের লক্ষ্য করে গুলি করেছে।
এই হত্যাকাণ্ডটি গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পশ্চিম তীরে চলমান ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার অংশ। ২১ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই অভিযানগুলোতে ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। পশ্চিম তীরে চলমান অভিযানগুলোতে ইসরায়েলি সেনারা গুলি করে মানুষ হত্যা, ঘরবাড়ি ধ্বংস এবং বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো ধ্বংস করছে, যার ফলে ফিলিস্তিনিদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী তাদের অভিযানে ফিলিস্তিনিদের পানি এবং পয়ঃনিষ্কাশন অবকাঠামোতে মারাত্মক ক্ষতি করেছে, যার ফলে সেখানকার বাসিন্দাদের জীবিকা ও স্বাস্থ্যের জন্য এটি গুরুতর বিপদ তৈরি করেছে।
ইসরায়েলি বাহিনী এসব অভিযান চালিয়ে যাওয়ার মধ্যে ফিলিস্তিনি শিশুদের লক্ষ্য করে হামলা আরও উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। শিশু অধিকার সংস্থাগুলো এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের জন্য ইসরায়েলি বাহিনীকে দায়ী করে এবং ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে।
এই হত্যাকাণ্ডের পর পশ্চিম তীর এবং গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর কার্যক্রম আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। জাতিসংঘ এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, ফিলিস্তিনিদের ওপর এই ধরনের হামলা ও সহিংসতা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল এবং এটি আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি।
মন্তব্য করুন