ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র সরিয়ে গাজার দখল নিতে চান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি উপত্যকাটিকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরায়’ পরিণত করার পরিকল্পনা করছেন। এ ধরনের প্রস্তাব প্রকাশ্যে বিশ্ব নেতাদের দিয়ে আসছেন ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রস্তাবে সায় দিয়েছে দখলদার ইসরায়েল। কিন্তু আরববিশ্ব ক্ষুব্ধ। এ পরিস্থিতে ফিলিস্তিনি শাসক গোষ্ঠীর আনুষ্ঠানিক বক্তব্য প্রত্যাশিত ছিল।
অবশেষে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বৈঠক করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ওয়াফার বরাতে আনাদোলু এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজা বিক্রি ইস্যুতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফিলিস্তিন। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) পশ্চিম তীরের রামাল্লায় ফাতাহের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ফাতাহর কেন্দ্রীয় কমিটি গাজা উপত্যকা বা অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূমির যেকোনো অংশ থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের সকল আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে। সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক জোর দিয়ে বলা হয়েছে, আরব এবং আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো এ ধরনের কাজকে আন্তর্জাতিক আইন এবং বৈধতার লঙ্ঘন বলে মনে করে। তাদের স্পষ্ট বিরোধিতার কারণে এই ধরনের পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ারই অবকাশ।
কমিটি জর্ডান, মিশর, সৌদি আরব এবং অন্যান্য আরব দেশগুলোর অবস্থানের প্রশংসা করেছে। পাশাপাশি যারা ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার বা তাদের বৈধ অধিকার ক্ষুণ্ন করার প্রচেষ্টা করে তাদের নিন্দা জানিয়ে প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেছে।
পশ্চিম তীরের রামাল্লায় ফাতাহের কেন্দ্রীয় কমিটির সভার উদ্বোধনী ভাষণ দেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। তাতে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, ফিলিস্তিন বিক্রির জন্য নয়। ফিলিস্তিনি জনগণের বাস্তুচ্যুতির যেকোনো আহ্বান তিনি প্রত্যাখ্যান করেন এবং তাতে অবিচল থাকবেন।
তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের দৃঢ় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে যে গাজা, পশ্চিম তীর বা জেরুজালেমসহ তাদের ভূখণ্ডের কোনো অংশই ছেড়ে দেওয়া হবে না।’ ফিলিস্তিনি স্বার্থের যেকোনো রাজনৈতিক সমাধানের ভিত্তি হিসেবে আন্তর্জাতিক বৈধতা এবং আরব শান্তি উদ্যোগ মেনে চলার গুরুত্বের ওপর জোর দেন তিনি।
এর আগে শনিবার আদ্দিস আবাবায় আফ্রিকান ইউনিয়নের শীর্ষ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যেও ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন মাহমুদ আব্বাস। ফিলিস্তিনিদের উৎখাতের স্বপ্ন যারা দেখছে তাদের ‘বিভ্রান্ত’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার গাজা দখলের প্রস্তাব দিচ্ছেন। গাজাবাসীকে পুনর্বাসিত করার আশ্বাসও দিচ্ছেন তিনি। তার মতে, উপত্যকাটিকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা’ হিসেবে পুনর্নির্মাণ করা হলে বহু কর্মসংস্থান হবে এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আসবে। নয়তো, সেখানে সব সময় যুদ্ধ লেগেই থাকবে। আরব বিশ্ব এবং অন্যান্য বহু দেশ এই ধারণাকে তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বলেছে, এটি জাতিগত নির্মূলের সমান।
বর্তমানে গাজায় যুদ্ধবিরতি চলছে। গত ১৯ জানুয়ারি কার্যকরের পর নানা অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও হামাস ও ইসরায়েল উভয়ই বন্দি বিনিময় অব্যাহত রেখেছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৪৮,৩০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গণহত্যার অভিযোগ উঠে ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে। এ যুদ্ধে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় গাজা। যুদ্ধবিরতির পর সেই ধ্বংসস্তূপেই পরিবার-পরিজন নিয়ে বাস করছেন ফিলিস্তিনিরা।
মন্তব্য করুন