গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরানো নিশ্চিত করতে নতুন একটি সরকারি অধিদপ্তর গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতির বরাত দিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েল সরকার এই নতুন অধিদপ্তর গঠনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের গাজা উপত্যকা ছাড়ার প্রক্রিয়াকে ‘সহজ ও কার্যকর’ করার পরিকল্পনা করছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, নতুন এ দপ্তর বিভিন্ন সরকারি সংস্থা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সমন্বয়ে পরিচালিত হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, গাজা উপত্যকা থেকে তৃতীয় কোনো দেশে ‘স্বেচ্ছায় অভিবাসন’ করতে ইচ্ছুক ফিলিস্তিনিরা বিশেষ সহায়তা প্যাকেজ পাবেন। এই প্যাকেজের আওতায় তাদের জন্য সমুদ্র, আকাশ এবং স্থলপথে প্রস্থানের বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে, যাতে গাজা ছাড়তে ইচ্ছুক ফিলিস্তিনিরা নিরাপদে অন্য দেশে যেতে পারেন। তবে ঠিক কোন দেশ গাজাবাসীদের গ্রহণ করবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ১৭ ফেব্রুয়ারি এক বিবৃতিতে বলেন, একটি নতুন গাজা তৈরির জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রতি আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি ঘোষণা দেন যে, চলমান যুদ্ধের পর গাজা উপত্যকা আর ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বা হামাসের নিয়ন্ত্রণে থাকবে না।
যুক্তরাষ্ট্র সফরে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা উপত্যকার দুই মিলিয়নের বেশি ফিলিস্তিনিকে উচ্ছেদ করে অঞ্চলটির পুনর্গঠনের প্রস্তাব দেন। পরবর্তী সময় ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা বিশ্বজুড়ে নিন্দার মুখে পড়েছে এবং আরব-মুসলিম বিশ্বে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই পরিকল্পনা মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছে। তারা বলছে, গাজা ‘দখল’ এবং ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার চেষ্টা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং জাতিগত নির্মূলের শামিল।
এছাড়া সম্প্রতি জেরুজালেমে সফরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও-র সঙ্গে এক বৈঠকে গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে ট্রাম্পের ‘সাহসী দৃষ্টিভঙ্গি’র প্রশংসা করেন নেতানিয়াহু। এরপরই নতুন দপ্তর গঠনের ঘোষণা আসে, যা ইসরায়েলের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইসরায়েলের এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করা এবং ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ আরও পাকাপোক্ত করা। তবে গাজার সাধারণ জনগণের জন্য এর ভবিষ্যৎ কী হতে পারে, তা এখনও অনিশ্চিত।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইসরায়েলকে এই পরিকল্পনা থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছে। তবে ইসরায়েল সরকার তাদের অবস্থানে অনড় এবং গাজার ভূখণ্ড পুনর্গঠনের পরিকল্পনা এগিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর বলে মনে হচ্ছে।
মন্তব্য করুন