যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের হুমকি উপেক্ষা করে পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় ঘোষণা দিয়েছে ইরান।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই জানিয়েছেন, ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি বৈধ ও আন্তর্জাতিক আইনসম্মত, যা কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। তিনি আরও বলেন, অন্য দেশকে হুমকি দেওয়া জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ইরানের প্রতিক্রিয়া নিয়ে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস অব ইসরায়েলের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
এর আগে রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ইরানের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানের ঘোষণা দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল একসঙ্গে কাজ করে ইরানের হুমকি মোকাবিলা করবে।
তিনি দাবি করেন, গত ১৬ মাসে ইসরায়েল তেহরানের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে এবং ভবিষ্যতেও কঠোর প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।
ইরানকে কখনোই পরমাণু শক্তিধর দেশ হতে দেওয়া হবে না উল্লেখ করে নেতানিয়াহু বলেন, মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইরানের ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীকে মোকাবিলার জন্য ইসরায়েল প্রস্তুত।
নেতানিয়াহুর সঙ্গে সুর মিলিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীও ইরানের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দেন। তিনি বলেন, হামাস, হিজবুল্লাহ, সিরিয়া কিংবা ইরাকি মিলিশিয়াদের পেছনে একটি সাধারণ শক্তি রয়েছে, আর তা হলো ইরান। এই শক্তিকে অবশ্যই মোকাবিলা করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের এই হুঁশিয়ারির পরদিন এক সংবাদ সম্মেলনে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই বলেন, তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি চলমান থাকবে এবং যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইসরায়েল আমাদের পথরোধ করতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, আপনারা একদিকে ইরানকে হুমকি দেবেন, অন্যদিকে সংলাপের কথা বলবেন—এটা কেমন নীতি?
বাঘাই দাবি করেন, ইরান গত তিন দশক ধরে পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির (এনপিটি) সদস্য হিসেবে শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি পরিচালনা করছে এবং এতে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি আরও বলেন, অন্যকে হুমকি দেওয়া আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের স্পষ্ট লঙ্ঘন। ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানের বিরুদ্ধে এ ধরনের পদক্ষেপ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
উল্লেখ্য, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও গোয়েন্দা রিপোর্টের বরাতে জানা গেছে, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রক্রিয়াকে ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধতায় নিয়ে যাচ্ছে। পরমাণু অস্ত্রের জন্য ৯০ শতাংশ বিশুদ্ধতা প্রয়োজন, যা নিয়ে সমালোচকরা বলছেন—এত বেশি সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুদের বেসামরিক কোনো উদ্দেশ্য নেই।
গাজা যুদ্ধের পর ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। গত বছর প্রথমবারের মতো একটি দেশ অপর দেশের ভূখণ্ড লক্ষ্য করে সরাসরি হামলা চালায়। সম্প্রতি মার্কিন গোয়েন্দারা সতর্ক করে বলেছেন, ইসরায়েল ২০২৫ সালের মাঝামাঝি ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালাতে পারে। এই হামলা ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে ধাক্কা দিতে পারে, তবে এটি মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে দেবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ইরান বলছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি বৈধ ও আন্তর্জাতিক আইনসম্মত। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল বলছে, ইরানের পরমাণু শক্তি অর্জন মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এই পরিস্থিতিতে আগামী দিনগুলোতে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন