ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা করেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দৃঢ় সমর্থনে তিনি ইরানের বিরুদ্ধে ‘শেষ আঘাত’ করতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে এই অভিযানে ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ কৌশল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
স্থানীয় সময় রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু এসব মন্তব্য করেন। খবর সিএনএন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফরের মাধ্যমে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের দৃঢ়তা পুনর্ব্যক্ত করেন এবং পারমাণবিক অস্ত্রের বিষয়ে ইরানের কৌশলকে কঠোরভাবে মোকাবিলা করার জন্য সমন্বিত পদক্ষেপের আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু তার বক্তৃতায় বলেন, গত ১৬ মাসে ইসরায়েল ইরানের সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে শক্তিশালী আঘাত হেনেছে এবং আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বে আমরা এই কাজটি শেষ করব।
তিনি আরও বলেন, ইরান কখনোই পারমাণবিক শক্তি হতে পারে না, কারণ এর ফলে পৃথিবী এবং অঞ্চল অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও ইরানকে একটি পারমাণবিক শক্তি হিসেবে না দেখতে চান না। এ ছাড়া বিশ্বব্যাপী সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতার জন্য ইরানকে দায়ী রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করতে, গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাস, হিজবুল্লাহ, পশ্চিম তীরের সহিংসতা, সিরিয়ার অস্থিতিশীলতা এবং ইরাকের মিলিশিয়াদের পেছনে মূল শক্তি হিসেবে রয়েছে ইরান। এগুলোর সবই ইরানের নীতির কারণে ঘটছে।
এদিকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলি সম্প্রতি একটি সতর্কতা জারি করে জানিয়েছে, ইসরায়েল এ বছর ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর আক্রমণ চালাতে পারে। এতে মধ্যপ্রাচ্যে একটি বৃহৎ সংঘাতের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে, তবে ইসরায়েল দাবি করেছে, এই পদক্ষেপটি কার্যকরের করা হবে।
গাজা উপত্যকার পরিস্থিতি নিয়েও ট্রাম্পের সঙ্গে একমত নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, গাজার বন্দিদের মুক্তি না হলে ‘নরকের দ্বার’ খুলে দেওয়া হবে।
ট্রাম্প সম্প্রতি গাজাকে ইসরায়েলের অধীনে নিয়ে ফিলিস্তিনিদের সেখান থেকে চিরতরে বিতাড়িত করার একটি পরিকল্পনা করেছেন, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। নেতানিয়াহু জানান, এই পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি আগেই জানতেন এবং ইসরায়েল সরকার এই বিষয়ে আলোচনা করেছে।
প্রসঙ্গত, গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকরের মধ্যে মার্কিন প্রশাসন সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলকে এক হাজার আটশত ভারী বোমার চালান পাঠিয়েছে। এই বোমাগুলি ইসরায়েলের বিমানবাহিনী ও সেনাবাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি করবে এবং তাদের সামরিক অভিযানে সহায়ক হবে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন এই বোমাগুলোর চালান আটকে রেখেছিল, তবে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর এগুলি পাঠানোর অনুমোদন দিয়েছেন।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের প্রধান সালামা মারুফ এই অস্ত্র সহায়তার তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ছিল গাজার নিরীহ জনগণের জন্য খাদ্য, পানি, চিকিৎসা ও আশ্রয় সরবরাহ করা, কিন্তু তারা এখন ভারী বোমা পাঠাচ্ছে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘন।
এদিকে, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি চলমান রয়েছে। এই চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা এখনো চলছে এবং এতে আরও ১৯ ইসরায়েলি সেনা ও আমেরিকান নাগরিকদের মুক্তি পাওয়ার বিষয়ে আলোচনা হবে।
মন্তব্য করুন