ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার জন্য একটি নতুন চুক্তির লক্ষ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ও ইরানের মধ্যে মধ্যস্থতা করার জন্য সৌদি আরব আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সৌদি আরবের এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য হচ্ছে ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সম্ভাবনা রোধ করা এবং মধ্যপ্রাচ্যে তার আঞ্চলিক প্রতিপত্তি পুনরুদ্ধারের জন্য একটি কূটনৈতিক সেতু গঠন করা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌদি আরব ইরানকে আঞ্চলিক সহযোগীদের দুর্বলতার মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দিকে ঝুঁকতে দেখে উদ্বিগ্ন। সৌদি আরবের মতে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের জন্য ইরানের দীর্ঘদিনের আঞ্চলিক সহযোগী দেশগুলোর ক্ষমতা বর্তমানে অনেক কমে গেছে। সৌদি আরব প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে ইরানকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা শুরু করতে উৎসাহিত করতে চায়।
সৌদি আরবের প্রস্তাব এবং লক্ষ্য
সৌদি আরব আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিষয়টি প্রস্তাব করেছে কিনা তা স্পষ্ট নয়, তবে এই পদক্ষেপের মাধ্যমে রিয়াদ তাদের সাবেক আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে এবং নতুন চুক্তির আলোচনায় একটি ভূমিকা রাখতে চায়।
সৌদি কর্মকর্তারা মনে করেন যে, বর্তমানে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দিকে ঝুঁকছে এবং তারা একটি নতুন পারমাণবিক চুক্তি করতে চায় যা এই প্রবণতা প্রতিরোধ করবে।
ইরানের প্রতিক্রিয়া
এদিকে, ইরানের পক্ষ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া এসেছে। গত সপ্তাহে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কারণ ওয়াশিংটন ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে গেছে। তবে তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ নিষিদ্ধ করা হয়নি, এবং ইরান তাদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করতে প্রস্তুত হতে পারে।
ট্রাম্পের পরমাণবিক চুক্তি এবং সৌদি আরবের ভূমিকা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নতুন পারমাণবিক চুক্তি করতে আগ্রহী এবং তিনি ইরানকে শান্তিপূর্ণভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ দিতে চান, তবে পারমাণবিক অস্ত্রহীনভাবে। ট্রাম্পের মতে, ইরান যদি একটি সফল এবং শান্তিপূর্ণ দেশ হয়ে ওঠে তবে তারাও মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারবে। তবে সৌদি আরবের উদ্বেগ হচ্ছে, যে ইরান অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে, সে হয়তো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারে।
সৌদি-ইরান সম্পর্কের উন্নতি এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা
সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সম্পর্ক গত কয়েক বছরে উত্তেজনা কমেছে, বিশেষ করে ২০২৩ সালে চীনের মধ্যস্থতায় দুই দেশ সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘোষণা দিয়েছে। সৌদি কর্মকর্তারা এই সম্পর্ককে একটি বড় সাফল্য হিসেবে দেখছেন, কারণ এর ফলে ইয়েমেনের হুথি গোষ্ঠী থেকে হামলা বন্ধ হয়েছে এবং ইরান-ইসরায়েল পাল্টা হামলার মধ্যে সৌদি আরব ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া এবং সৌদির কূটনৈতিক কৌশল
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সৌদি আরব এখনও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক বজায় রেখে আঞ্চলিকভাবে অন্যান্য বিকল্প কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইছে। সৌদি-ইরান সম্পর্কের এই নতুন সেতু তৈরি করার পদক্ষেপ ট্রাম্পের সর্বোচ্চ চাপ কৌশল থেকে সৌদি আরবকে পৃথক রাখতে চাচ্ছে, এমনটাই মনে করছেন তারা।
ফিলিস্তিন সংকট এবং সৌদি-ইসরায়েল সম্পর্ক
সম্প্রতি ট্রাম্প সৌদি-ইরান সম্পর্কের মধ্যে কূটনৈতিক কার্যক্রমের সম্ভাবনা নিয়ে মন্তব্য করেছেন। সৌদি-ইসরায়েল সম্পর্কের স্বাভাবিকীকরণের বিষয়ে ট্রাম্প আশাবাদী হলেও সৌদি আরব এ বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে, যে তারা ফিলিস্তিনিদের অধিকার রক্ষার শর্তে এবং একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে না।
এ ছাড়া, সৌদি আরব ইরানের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাদের কূটনৈতিক কৌশল আরও নমনীয় করে তুলতে চায়, যাতে তাদের নিজস্ব জাতীয় স্বার্থ ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা যায়।
মন্তব্য করুন