ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির মধ্যেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এমকে-৮৪ নামের ভারী বোমার একটি চালান ইসরায়েলে পৌঁছেছে।
স্থানীয় সময় শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে এ চালান গ্রহণ করেছে বলে নিশ্চিত করেছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ।
রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।
এমকে-৮৪ বোমা হলো ২ হাজার পাউন্ড ওজনের একটি শক্তিশালী বিস্ফোরক, যা পুরু কংক্রিট এবং ধাতব কাঠামো ভেদ করতে সক্ষম। বিস্ফোরণের ফলে এটি ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি করতে পারে।
জো বাইডেনের প্রশাসন ইসরায়েলের কাছে এই ধরনের ভারী বোমার রপ্তানি বন্ধ রেখেছিল। কারণ, গাজা উপত্যকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহারের ফলে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা থেকে হামাসের হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে কয়েক হাজার ২,০০০ পাউন্ড ওজনের বোমা সরবরাহ করেছিল। তবে কিছু চালান পরবর্তীতে বাইডেন প্রশাসন স্থগিত রাখে। তবে গত মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর নতুন এই চালান ইসরায়েলে পৌঁছেছে।
১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের অনুমোদিত এ বোমা চালান ইসরায়েলি বিমানবাহিনী এবং প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জন্য গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। এটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের আরও একটি প্রমাণ।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, তারা আইডিএফ বাহিনীর জন্য যুদ্ধাস্ত্র সংগ্রহ ও পরিবহনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ৬৭৮টি ফ্লাইট এবং ১২৯টি সামুদ্রিক চালানের মাধ্যমে প্রায় ৭৬ হাজার টন সামরিক সরঞ্জাম ইসরায়েলে পৌঁছেছে। যা ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সামরিক সরবরাহ অভিযানের একটি।
প্রসঙ্গত, বাইডেন প্রশাসন শেষ মুহূর্তে এসে ইসরায়েলের এ শক্তিশালী অস্ত্রের চালান স্থগিত করেছিল। তবে ২৫ জানুয়ারি শপথ নেওয়ার পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চালানগুলো পুনরায় চালুর অনুমোদন দেন। এরপর নিজের ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে ট্রাম্প লেখেন, ‘ইসরায়েল অনেক কিছু চেয়েছিল, অর্থও দিয়েছিল; কিন্তু বাইডেন প্রশাসন তা সরবরাহ করেনি। সেগুলো এখন ইসরায়েলের পথে রয়েছে।’
এই অস্ত্র সরবরাহ এমন এক সময়ে হলো, যখন গাজায় সম্প্রতি হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি কতদিন স্থায়ী হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, গাজায় আটক ইসরায়েলি ব্যক্তিদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল। তবে উভয়পক্ষই চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলছে।
এদিকে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা দিয়েছে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন। এ ভয়াবহ নতুন বোমার চালান ইসরায়েলের আগ্রাসী সামরিক অভিযানে আরও গতি আনতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন