জর্ডানে প্রায় ২৫ বছর ধরে শাসন করছেন বাদশাহ আব্দুল্লাহ। দীর্ঘ এই সময়ে বেশ কয়েকবার ওয়াশিংটন সফর করেছেন তিনি। তবে গেল সপ্তাহে করা তার ওয়াশিংটন সফর ছিল টান টান উত্তেজনায় ভরা। মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাশে অনেকটা ভীরুভাবে বসেছিলেন বাদশাহ আব্দুল্লাহ। গাজা নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা ইস্যুতে সাংবাদিকরা একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু অধিকাংশ সময়ই চুপচাপ বসে থাকতে দেখা যায় জর্ডানের বাদশাহকে।
কয়েক সপ্তাহ আগের কথা। ট্রাম্প ভয়ানক এক প্রস্তাব দেন। সেই প্রস্তাবে গাজাকে খালি করে সেখানকার বাসিন্দাদের জর্ডান ও মিসরে ঠাঁই দেওয়ার কথা বলা হয়। পাশাপাশি গাজা দখলের হুমকিও দিয়ে রাখেন ট্রাম্প। অধিকৃত এই উপত্যকা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই এমন স্বপ্ন লালিত করে আসছে ইসরায়েল।
তবে ট্রাম্পের প্রস্তাব নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন আরব নেতারা। জর্ডানও এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে। কিন্তু ট্রাম্পের পাশে বসে বাদশাহ আব্দুল্লাহ ভেজা বেড়াল বনে যান।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজার এত বিপুল জনগোষ্ঠীকে ঠাঁই দিলে এটা জর্ডানের হাশেমি রাজতন্ত্রের কাফনে পেরেক ঠোকার মতো হবে। এমনকি এতে বদলে যাবে জর্ডানের জনসংখ্যার চিত্রও। বর্তমানে জর্ডানের জনসংখ্যা ১ কোটি ১৫ লাখ। এই জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেকই ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত। এই ফিলিস্তিনি-জর্ডানিরা ১৯৪৮ সালে নাকাবার সময় বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯৬৭ সালেও আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় লাখ লাখ ফিলিস্তিনি জর্ডানে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা কয়েক দশক ধরেই ফিলিস্তিনিদের জর্ডানে ঠেলে পাঠানোর এই ধারণাকে নিজেদের রাজনৈতিক এজেন্ডা বানিয়েছে। এমনকি ১৯৮০-র দশকে ডানপন্থি ইসরায়েলিরা জর্ডানই ফিলিস্তিন এমন স্লোগান নিয়ে হাজির হয়। তাদের দাবি, জর্ডান নদীর পূর্ব তীর ঘেঁষেই ছিল ফিলিস্তিন রাষ্ট্র। এমন পরিস্থিতি ঠেকাতে ১৯৮৮ সালে পশ্চিম তীরের বাসিন্দাদের নাগরিকত্ব দেওয়া বন্ধ করে দেয় জর্ডান। ফিলিস্তিনিদের বিকল্প আবাসভূমি হিসেবে জর্ডান যেন স্বীকৃতি না পায় সেজন্যই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
ফিলিস্তিনিরা এমনিতেই জর্ডানে সংখ্যাগরিষ্ঠ। নতুন করে গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের জর্ডানে জায়গা দেওয়া হলে জনকাঠামো বদলে যাবে। এতে জর্ডানও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। এ ছাড়া পশ্চিম তীরও ইসরায়েলের জন্য দখল করা সহজ হয়ে যাবে। এটা নিয়েও উদ্বিগ্ন জর্ডান। আবার কথামতো না চললে অর্থ সহায়তা বন্ধ করে দেওয়ারও হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। বর্তমানে প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ১৪৫ কোটি ডলার সহায়তা পায় জর্ডান। এখন এই সহায়তাও হাতছাড়া হবার জোগাড়।
মন্তব্য করুন