ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাকে দেশে ফিরিয়ে বিচারের মুখোমুখি করা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনালের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ড. ইউনূস বলেন, ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের শাস্তি এড়াতে দেওয়া হবে না। শেখ হাসিনা এবং তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের খুঁজে বের করে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে এবং আইনের পূর্ণ শক্তির মুখোমুখি হতে হবে।
দুবাইয়ে ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সম্মেলনে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমরা শেখ হাসিনাকে ফেরানোর জন্য ভারতকে নোটিশ পাঠিয়েছি। তার বিরুদ্ধে জাতিসংঘের হাইকমিশনারের মানবাধিকার সংক্রান্ত প্রতিবেদনসহ আমাদের কাছে প্রচুর প্রমাণ আছে। এগুলো তার অপকর্মের সাক্ষী। জাতিসংঘ এটি নথিভুক্ত করেছে। এছাড়া তিনি, তার সরকার এবং তার সমর্থকরা কী করেছেন তার প্রচুর প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছি। আমরা আশা করছি যে, আইনি প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে এবং আমরা তাকে বিচারের আওতায় আনব। এটা ঘটতে হবে, অন্যথায় মানুষ আমাদের ক্ষমা করবে না।
এর আগে গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন। এতে এক হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে এক হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। নিহতদের মধ্যে ১২ শতাংশ শিশু রয়েছেন। এ ছাড়া এ সময়ে হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ নিরাপত্তাবাহিনীর দ্বারা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, আন্দোলনে ৮৪১ জন নিহত হয়েছেন। তবে জাতিসংঘের এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয়ের এ তথ্য সম্ভবত অসম্পূর্ণ। কেননা এ সময়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা হতাহতদের ব্যাপক চাপ সামলেছেন। এ ছাড়া বেশকিছু মামলা সঠিকভাবে রেকর্ড করা হয়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ সময়ে অন্তত ১৩ হাজার ৫২৯ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্তত ৩৯০ জন নারী রয়েছেন। এ ছাড়া এ সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে অন্তত ১১ হাজার ৭০২ জন আটক হয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, বাংলাদেশে সাবেক সরকার এবং নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সহিংস কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি আন্দোলনে পদ্ধতিগতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িত ছিল।
মন্তব্য করুন