গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস ও ইসলামিক জিহাদ তিন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এই মুক্তির মাধ্যমে ৩৬৯ ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পাবে।
শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) হামাসের সামরিক শাখা কাসাম ব্রিগেড একটি টেলিগ্রাম পোস্টে তিন জিম্মির নাম প্রকাশ করে। খবর টাইমস অব ইসরায়েল।
মুক্তি পেতে যাওয়া এই তিন জিম্মির নাম হলো আমেরিকান বংশোদ্ভূত ইসরায়েলি নাগরিক সাগুই ডেকেল-চেন, রাশিয়ান বংশোদ্ভূত ইসরায়েলি নাগরিক আলেকজান্ডার ‘সাশা’ ট্রুফানভ এবং আর্জেন্টিনা বংশোদ্ভূত ইসরায়েলি নাগরিক ইয়ের হর্ন।
এই তিন জিম্মি ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে গাজার সংঘর্ষের সময় বন্দি হন। ইসরায়েলি সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মিসর এবং কাতারের মধ্যস্থতাকারীরা এই তিনজনের মুক্তির তালিকা হামাসের কাছ থেকে পেয়েছে এবং তারা নিশ্চিত করেছে যে, এই তিন জিম্মি আগামী শনিবার মুক্তি পাবেন।
ইসরায়েল আরও জানিয়েছে, তিন জিম্মির পরিবারের সদস্যদের ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই তিন ইসরায়েলি জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে শনিবার ৩৬৯ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে। এসব বন্দি ৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে ইসরায়েলি বাহিনী কর্তৃক আটক হন। তাদের মধ্যে ৩৩৩ জন সাধারণ বন্দি এবং ৩৬ জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি রয়েছে।
ফিলিস্তিনের প্রিজনার মিডিয়া অফিসের মতে, এ পর্যন্ত প্রায় ২০০০ ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তির প্রক্রিয়া চলছে। এই বন্দিরা ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর অভিযোগ ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে বন্দি ছিলেন। ইসরায়েলি সরকার শনিবার ৩৬৯ জন বন্দি মুক্তি দেওয়ার কথা নিশ্চিত করেছে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে এই বন্দিবিনিময় হচ্ছে। গত ১৯ জানুয়ারি, হামাস এবং ইসরায়েল এই যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। তবে, সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) হামাস অভিযোগ করেছিল যে, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছে এবং এই কারণে তারা জিম্মি মুক্তির প্রক্রিয়া স্থগিত করেছে।
এই ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হামাসকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যদি শনিবার দুপুর ১২টার মধ্যে সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি না দেওয়া হয়, তাহলে যুদ্ধবিরতি বাতিল হয়ে যাবে। ট্রাম্প আরও বলেন, হামাসকে তাদের প্রতিশ্রুতি পালন করতে হবে এবং মুক্তি দিতে হবে সব জিম্মিকে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে বলেন, যদি জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়া হয়, তাহলে গাজার উপর আবারও হামলা শুরু করা হবে। তিনি বলেন, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত পালনের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে।
এখন পর্যন্ত হামাস যুদ্ধবিরতির অধীনে ১৬ ইসরায়েলি এবং পাঁচ থাই নাগরিককে মুক্তি দিয়েছে। এর বিনিময়ে, ইসরায়েল কয়েকশ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে ৩৩ ইসরায়েলি মুক্তি দেওয়ার কথা রয়েছে।
গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির এই চুক্তি অনুসারে, বন্দি বিনিময় প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে এবং এর মাধ্যমে আশা করা হচ্ছে যে, গাজার পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হবে। তবে, পরিস্থিতি এখনো জটিল এবং আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রয়েছে।
মন্তব্য করুন