ফিলিস্তিনিদের প্রতি নিজেদের সমর্থন ঘোষণা করে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সেই বক্তব্যের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে সৌদি আরব। যেখানে নেতানিয়াহু সৌদি আরবের ভূখণ্ডে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছিলেন।
রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানায়, সৌদি আরব এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এবং ফিলিস্তিনি জনগণের নিজস্ব ভূখণ্ডে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অধিকারকে সমর্থন করে। খবর রয়টার্স।
বিবৃতিতে জানায়, তারা ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বক্তব্যকে স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করছে। সৌদি আরবের মতে, এই ধরনের প্রস্তাব ফিলিস্তিনিদের নিজস্ব ভূখণ্ডে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক। সৌদি বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার কোনো অবস্থাতেই কেড়ে নেওয়া যাবে না।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্র সফরে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু একটি সাক্ষাৎকারে দাবি করেছিলেন, সৌদি আরবে ফিলিস্তিনিদের জন্য পর্যাপ্ত খালি জমি রয়েছে, যেখানে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। তবে সৌদি আরব এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে জানায়, তাদের ভূখণ্ডে কোনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টি তারা সমর্থন করে ন। বরং ফিলিস্তিনিদের নিজস্ব ভূখণ্ডে ‘ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠাকে সমর্থন করে সৌদি আরব।
এ বিষয়ে সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক টুইট বার্তায় আরও স্পষ্টভাবে জানায়, ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার অধিকার এবং তাদের নিজ ভূমিতে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতি সৌদি আরবের সমর্থন কখনোই পরিবর্তন হবে না। সৌদি আরব এও জানায়, ফিলিস্তিনিরা তাদের নিজ ভূখণ্ডে প্রথম অধিকারী এবং অন্যকোনো দেশ বা রাষ্ট্রের মাধ্যমে তাদের এই অধিকার মুছে ফেলা যাবে না।
এদিকে, সৌদি আরবের এই অবস্থানটি শুধু ইসরায়েলকে নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও একটি শক্তিশালী বার্তা দিয়েছে। সৌদি আরবের এই প্রতিক্রিয়া, যেখানে তারা ফিলিস্তিনিদের সার্বভৌম অধিকারকে সমর্থন জানাল, তা আন্তর্জাতিকভাবে ফিলিস্তিনের প্রতি সৌদির দৃঢ় অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করে।
মিসর, জর্ডান এবং অন্যান্য আরব দেশও সৌদি আরবের এই পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়েছে। মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ফিলিস্তিনিদের অধিকার ঐতিহাসিকভাবে প্রতিষ্ঠিত এবং এটি প্রত্যেক আরব দেশের দায়িত্ব এই অধিকার রক্ষা করা।
এ ছাড়া, সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও দাবি করেছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা এবং ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়িয়ে সৌদি আরব ইসরায়েলের উদ্দেশ্যে যে শক্ত অবস্থান নিয়েছে, তা আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘ সনদের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা।
সৌদি আরবের এই দৃঢ় বক্তব্য এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি তাদের সমর্থন ইসরায়েল এবং পশ্চিমা শক্তির জন্য একটি স্পষ্ট বার্তা হিসেবে কাজ করেছে। সৌদি আরব কখনোই তাদের মৌলিক নীতি থেকে বিচ্যুত হবে না। সৌদি আরবের এই অবস্থান ফিলিস্তিনের জন্য একটি শক্তিশালী কূটনৈতিক সিগন্যাল হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, যা আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় নতুন আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার ‘দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকবে’ এবং যে কোনো শান্তিপূর্ণ সমাধান কেবল দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের মাধ্যমে অর্জিত হতে পারে।
মন্তব্য করুন