ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে তিনজন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে। এর বিনিময়ে ইসরায়েল ১৮৩ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী, বন্দিবিনিময়ের পঞ্চম ধাপে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়।
হামাসের পক্ষ থেকে মুক্তি পাওয়া তিনজন ইসরায়েলি জিম্মি হলেন এলি শারাবি, ওহাদ বেন অ্যামি ও ওর লেভি। অন্যদিকে, ইসরায়েল কারাগার থেকে ১৮৩ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেয়, যাদের মধ্যে অনেকেই আগে থেকে বন্দি ছিলেন।
উল্লেখ্য, যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম পর্যায়ে নির্ধারিত তিন সপ্তাহের মধ্যে হামাস আরও ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। ইসরায়েলও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তারা ১ হাজার ৯০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছেড়ে দেবে। তবে ইসরায়েলের দাবি, ওই ৩৩ জন জিম্মির মধ্যে আটজন ইতোমধ্যে মারা গেছেন।
যুদ্ধ ও মানবিক সংকট
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে ২৫১ জনকে জিম্মি করে এবং ১ হাজার ২০০ মানুষকে হত্যা করে। এরপরই ইসরায়েল গাজায় পাল্টা হামলা চালায়, যা যুদ্ধের রূপ নেয়। এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী অন্তত ৪৭ হাজার ৫০০ মানুষ নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলি হামলায় গাজার দুই-তৃতীয়াংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে।
যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকলেও গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে ঘোষণা দিয়েছেন, গাজাকে ফাঁকা করার পরিকল্পনা রয়েছে। জাতিসংঘ ও আরব দেশগুলো এই ঘোষণার কড়া সমালোচনা করেছে।
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ও কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া
মিসর, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানালেও ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে আলোচনা এখনো চলছে। মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক মন্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছে, যেখানে সৌদি ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেওয়া হয়। মিসর এটিকে সৌদি সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন বলে নিন্দা জানিয়েছে।
এদিকে, ইসরায়েলের জন্য ৭৪০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই চুক্তির আওতায় গোলাবারুদ, ক্ষেপণাস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম ইসরায়েলকে সরবরাহ করা হবে। এমন সিদ্ধান্ত এমন সময় এলো, যখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ওয়াশিংটন সফর শেষ করেছেন এবং মার্কিন প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
গাজায় যুদ্ধ শেষ হবে কি না, তা নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়েছে। তবে চলমান যুদ্ধবিরতির আলোচনাগুলো শান্তি প্রক্রিয়ার দিকে অগ্রসর হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
মন্তব্য করুন