ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি চলার মধ্যেই নতুন এক ভয়াবহ সত্য উদঘাটিত হয়েছে। উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলি সেনাদের তৈরি বালুর ঢিবির নিচ থেকে ৬৬ ফিলিস্তিনির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ইসরায়েলি সেনাদের সামরিক অভিযানের সময় এসব ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে ঢিবির নিচে চাপা দিয়েছিল।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলুর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানান, ইসরায়েলের সেনারা গাজার উত্তরাঞ্চলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। তারা বুলডোজিং অভিযানের মাধ্যমে বহু স্থাপনা ধ্বংস করেছে এবং আত্মরক্ষার জন্য ব্যবহৃত বালুর ঢিবিগুলো ফিলিস্তিনিদের জন্য মৃত্যুকূপে পরিণত করেছে।
এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, উদ্ধার হওয়া ৬৬ জনের মধ্যে ৩৭টি মরদেহ জাবালিয়া শহর থেকে এবং ২৯টি গাজার শাতি শরণার্থী শিবির থেকে পাওয়া গেছে। এসব মরদেহ কয়েক সপ্তাহ বা মাস ধরে মাটির নিচে চাপা ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মাহমুদ বাসাল আরও বলেন, ইসরায়েলি হামলার কারণে বহু মানুষ রাস্তায়, স্কোয়ারে এবং পার্কে মৃত্যুবরণ করেছে। তখন নিরাপদ সমাধিস্থানের সুযোগ না থাকায় স্বজনরা তাদের মরদেহ যেখানে-সেখানে কবর দিতে বাধ্য হয়েছেন। এখনো অনেক কবর অজানা রয়ে গেছে, কারণ ধ্বংসস্তূপ ও বালুর নিচে বহু মরদেহ চাপা পড়ে আছে।
তিনি আরও জানান, গাজার সিভিল ডিফেন্স টিম এবং মেডিকেল কর্মীরা সীমিত সম্পদের মধ্যেও মরদেহ উদ্ধারে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে গাজা উপত্যকায় বাস্তুচ্যুত হাজারো মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়েছে প্রতিকূল আবহাওয়া। ঝোড়ো বাতাসের কারণে অনেক শরণার্থী শিবিরের তাঁবু উড়ে গেছে, আবার ভারি বৃষ্টিতে বহু তাঁবু পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধ সংকট আরও তীব্র হয়েছে।
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন চলমান থাকায় প্রতিদিনই নতুন নতুন মানবিক বিপর্যয়ের খবর আসছে। ফিলিস্তিনিরা অভিযোগ করেছেন, ইসরায়েল শুধু সামরিক হামলাই চালাচ্ছে না, বরং কৌশলগতভাবে জীবনযাত্রার সব ব্যবস্থাকে ধ্বংস করছে। খাদ্য ও পানি সরবরাহ বন্ধ করে, বাসস্থান ধ্বংস করে এবং মৌলিক সেবা বন্ধ রেখে ফিলিস্তিনিদের জীবন দুর্বিষহ করে তোলা হয়েছে।
বিশ্বের মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ পরিস্থিতিকে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় হিসেবে আখ্যায়িত করেছে এবং দ্রুত আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।
মন্তব্য করুন