ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে সৌদি আরবের ভূমি ব্যবহার করে ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সৌদি আরবে প্রচুর খালি জায়গা রয়েছে, যেখানে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠন করা যেতে পারে।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) চ্যানেল ১৪ কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু এ অভিমত ব্যক্ত করেন। শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) এ তথ্য জানায় ইসরায়েলি গণমাধ্যম জেরুজালেম পোস্ট।
সৌদি আরবের ভূমি এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র
নেতানিয়াহু বলেছেন, সৌদি আরবে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করতে পারে, সেখানে প্রচুর খালি ভূমি রয়েছে। তার মতে, এই উদ্যোগ ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য একটি সমাধান হতে পারে, যা সৌদি আরবের দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক এবং ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে পারে।
তবে, তিনি এও উল্লেখ করেন যে, সৌদি আরবের ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনিরা রাষ্ট্র গঠন করবে কিনা, তা সৌদি আরবের নিজের সিদ্ধান্ত।
সৌদি আরবের শর্ত এবং ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া
সৌদি আরব, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পূর্বশর্ত হিসেবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের কথা বলেছে। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়ে দিয়েছে যে, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠন না হওয়া পর্যন্ত তারা ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো আলোচনা করতে আগ্রহী নয়। এই পরিস্থিতিতে, নেতানিয়াহু এ শর্তকে প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, আমি এমন কোনো চুক্তিতে যাব না, যা ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে বিপদে ফেলবে।
তিনি আরও বলেন, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের বিষয়ে সম্মত হওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়, বিশেষ করে ৭ অক্টোবর পরবর্তী পরিস্থিতি বিবেচনায়।
নেতানিয়াহু গাজার পরিস্থিতির দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র ছিল, সেটার নাম গাজা। গাজার নেতৃত্বে ছিল হামাস এবং তাদের শাসনেই সেখানে ঘটে গিয়েছিল এক বিশাল গণহত্যা। তিনি আরও বলেন, গাজার ওই পরিস্থিতি ইসরায়েলের নিরাপত্তা সংকটকে আরও তীব্র করেছে।
ওয়াশিংটন সফর এবং সৌদি-ইসরায়েল সম্পর্ক
বর্তমানে ওয়াশিংটনে অবস্থানরত নেতানিয়াহু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। ওই বৈঠকে ট্রাম্প সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক পুনঃস্থাপন এবং স্বাভাবিক করার বিষয়টি উল্লেখ করেন।
এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প জানান, সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে পারলে এটি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
তবে, কিছু ইসরায়েলি কর্মকর্তার মতে, নেতানিয়াহু সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিনিময়ে গাজার যুদ্ধের অবসান এবং পশ্চিম তীরের অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় বিলম্ব ঘটাতে পারেন। তারা আশঙ্কা করছেন, এমনটি হলে ফিলিস্তিনিদের প্রতি আরও বড় ধরনের অবহেলা হতে পারে।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
এদিকে, সৌদি আরবের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা আগে না হওয়ার কথা জানিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা শুরু না করার অবস্থান পরিষ্কার করা হয়েছে। তবুও, নেতানিয়াহু সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে আগ্রহী। সেক্ষেত্রে পশ্চিম তীরের অধিগ্রহণ ও গাজার পরিস্থিতি পরিবর্তন করার জন্য তাকে কূটনৈতিকভাবে আরও শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে হবে।
এ সব ঘটনাপ্রবাহ মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল এবং অস্থির করে তুলছে, যেখানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শক্তি এবং দেশের মধ্যে কূটনৈতিক হিসাব-নিকাশ চলমান রয়েছে।
মন্তব্য করুন