মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক পরিবর্তন ও আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন। বৈঠকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকছে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা—যেখানে নতুন মার্কিন-ইসরায়েলি পরিকল্পনা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে ধারণা।
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নেতানিয়াহু ওয়াশিংটনের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে কী কী বিষয়ে আলোচনা হতে পারে তার ধারণা দেন।
তিনি বলেন, গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের শাসনের অবসান এবং ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন প্রধান লক্ষ্য। শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে আমরা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির বলয় সম্প্রসারিত করব এবং গাজার সংকট সমাধানের একটি কার্যকর পথ বের করব।
গাজায় ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা কমানোর গোপন পরিকল্পনা?
ট্রাম্পের সঙ্গে নেতানিয়াহু একটি নতুন মার্কিন পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করবেন, যার মূল লক্ষ্য গাজার জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমানো। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন কৌশল অনুযায়ী, গাজা থেকে ব্যাপকভাবে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নেওয়া গেলে হামাস শাসনের অবসান ঘটানো সহজ হবে। এটি ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য দীর্ঘমেয়াদে লাভজনক হতে পারে।
তবে এই পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে মানবাধিকার সংগঠনগুলো একে দমনপীড়ন এবং জোরপূর্বক স্থানান্তরের কৌশল হিসেবে দেখছে।
গাজা দখলের পরিকল্পনায় কী রয়েছে?
নেতানিয়াহু জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে তার আলোচনায় মূলত ৩টি বিষয় প্রাধান্য পাবে— হামাসকে সম্পূর্ণ নির্মূল করা, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সেনাদের উপস্থিতি বাড়ানো এবং ফিলিস্তিনিদের গাজা ছাড়তে বাধ্য করা।
নেতানিয়াহু বলেন, আমরা এমন একটি মধ্যপ্রাচ্য গড়তে চাই, যেখানে ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকবে এবং সন্ত্রাসবাদ শিকড় গাড়তে পারবে না।
গাজায় হামলা জোরদার করবে ইসরায়েল?
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প-নেতানিয়াহুর বৈঠকের পর গাজায় সামরিক অভিযানের মাত্রা আরও তীব্র হতে পারে। সম্প্রতি গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলা ও স্থল অভিযান ব্যাপকহারে বেড়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শুধু গত এক মাসেই ৩,৫০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
নেতানিয়াহু বলেন, শক্তির মাধ্যমে আমরা শান্তি প্রতিষ্ঠা করব। গাজার সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই আমাদের নৈতিক কর্তব্য।
আরব বিশ্ব ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন পরিকল্পনা আরব বিশ্বে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে, সৌদি আরব ও কাতার যদি ফিলিস্তিনের পক্ষে কঠোর অবস্থান নেয়, তবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সহজ হবে না।
তবে নেতানিয়াহু আশাবাদী, আরব দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে এবং শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে আমরা মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ নতুনভাবে গড়তে পারব।
প্রসঙ্গত, নেতানিয়াহু ও ট্রাম্পের বৈঠক শুধু একটি কূটনৈতিক আলোচনা নয়, বরং এটি গাজার ভবিষ্যতের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। নেতানিয়াহুর ভাষায়, আমরা শান্তির বলয় সম্প্রসারিত করতে যাচ্ছি। গাজা আমাদের নিয়ন্ত্রণে আসবেই।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই আলোচনার ফলে গাজায় দীর্ঘস্থায়ী দখলদারিত্ব এবং জনসংখ্যা পরিবর্তনের চেষ্টা হতে পারে, যা শুধু ফিলিস্তিন নয়, সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে বদলে দিতে পারে।
মন্তব্য করুন