গাজা ও মিশরের মধ্যবর্তী রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং থেকে ইসরায়েল সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ১৯ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্তে মেনে তারা সেনা সরিয়ে নেয়। শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) ইসরায়েল ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ইসরায়েলি আর্মি রেডিওর বরাতে আনাদোলু এজেন্সি জানায়, শুক্রবার ইসরায়েলি সেনারা সরে গেছে। ক্রসিংটি পুনরায় খোলার প্রস্তুতি হিসেবে তারা একটি আন্তর্জাতিক বাহিনীর কাছে নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করেছে। জানা গেছে, সেই বাহিনীটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ)।
নাম উল্লেখ না করে একজন নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে রেডিওটি জানিয়েছে, ক্রসিং থেকে সরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা-মিশর সীমান্তবর্তী একটি এলাকায় তাদের বাহিনী মোতায়েন করেছে। সেখানে নতুন অবস্থান নিয়েছে তারা।
ইইউ মিশন ও ওই সূত্রটি জানিয়েছে, রামাল্লা-ভিত্তিক ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ফিলিস্তিনি দিক থেকে ক্রসিংটি পরিচালনা করবে। যার ভূমিকা হবে গাজা থেকে বিদ্যমান পারমিট অনুমোদন করা। তাদের সামরিক উপস্থিতি থাকবে কি না তা নিশ্চিত নয়।
সম্প্রচার মাধ্যমটির সংবাদদাতা ডোরন কাদোশ বলেন, প্রতিদিন ৫০ জন আহত ফিলিস্তিনিকে যাতায়াত করার অনুমতি দেওয়া হবে। প্রতিজন আহতের সঙ্গে তিনজন যেতে পারবেন। এ হিসেবে কমবেশি মিলিয়ে সর্বোচ্চ প্রতিদিন ২০০ জনকে ক্রসিং অতিক্রমের সুযোগ দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, আহতদের সবার এবং তাদের সঙ্গীদের নাম-পরিচয় ইসরায়েলি জেনারেল সিকিউরিটি সার্ভিস শিন বেট যাচাই-বাছাই করবে। অপর দিকে তাদের ক্রসিংয়ে মিশরের অনুমোদন থাকতে হবে।
ইইউ জানিয়েছে, দক্ষিণ গাজা উপত্যকাকে মিশরের সঙ্গে সংযুক্ত করা রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং পুনরায় চালু করা হয়েছে। আহতদের চিকিৎসা সেবার প্রয়োজনকে এখানে প্রাধান্য দেওয়া হবে।
ইইউর পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কাজা কালাস এ সংক্রান্ত এক এক্স বার্তায় বলেন, ইউরোপ সাহায্য করতে এখানে এসেছে। ফিলিস্তিনি এবং ইসরায়েলিদের অনুরোধে আজ (শুক্রবার) রাফাহ ক্রসিংয়ে ইইউর বেসামরিক সীমান্ত মিশন মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের মে মাসে যুদ্ধ যখন তুঙ্গে তখন গাজার ‘লাইফলাইন’ খ্যাত রাফা সীমান্ত এলাকাটি দখলের পর সেখানে আর্টিলারিসহ বিপুল ইসরায়েলি সেনা অবস্থান নেয়। তারা ব্যাপক হামলার পর রাফা সীমান্ত ক্রসিংয়ের গাজা অংশের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।
গাজার দক্ষিণে রাফা। গাজার সঙ্গে বহির্বিশ্বের যোগাযোগে অন্যতম রাফা সীমান্ত ক্রসিং।
মিসরের সিনাই মরুভূমি সংলগ্ন একটি সীমান্ত পথ এ ক্রসিং। অন্য দুটি সীমান্ত পথ অনেক আগে থেকে ইসরায়েলের দখলে থাকায় মিসরের এই সীমান্ত পথটিই গাজার উদ্বাস্তুদের একমাত্র ভরসা।
এ কারণে রাফা সীমান্তটিই বেসামরিক নাগরিকদের গাজা ত্যাগ করার একমাত্র স্থলপথ হিসেবে বিবেচিত। গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানোর ক্ষেত্রেও রাফা গুরুত্বপূর্ণ।
ক্রসিংটি ইসরায়েলের দখলে চলে যাওয়ার পর ত্রাণসহায়তা স্থবির হয়ে পড়বে। এতে আরও দুর্ভোগে পড়েন যুদ্ধে বিধ্বস্ত গাজাবাসী। তখন আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের দাবিতেও ক্রসিং বন্ধে অনড় থাকে ইসরায়েল। তারা ক্রসিংটি দিয়ে অতি জরুরি ত্রাণসহায়তাও প্রবেশের অনুমতি দিতে চাইত না। বিভিন্ন দেশের চাপে মাঝেমধ্যে কিছু ছাড় দিলেও দিনের পর দিন বহু ত্রাণবাহী লরি নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে মিশরের অংশে দাঁড় করিয়ে রাখত। এতে কার্গোতেই পঁচে যায় অসহায়দের জন্য বহির্বিশ্বের পাঠানো শত শত টন খাদ্যদ্রব্য।
মন্তব্য করুন