সিরিয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হয়েছেন দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরীর আল শামের (এইচটিএস) প্রধান ও দেশটির ডি ফ্যাক্টো নেতা আহমেদ আল শারা।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদসংস্থার সানার বরাতে আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়ার সংবিধানকে বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বিদ্রোহী নেতা। এ ছাড়া তাকে অন্তর্বর্তীকালীন পর্যায়ে একটি অস্থায়ী আইন পরিষদ গঠনেরও ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। নতুন সংবিধান গৃহীত না হওয়া পর্যন্ত এ পরিষদ তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
সানা জানিয়েছে, সিরিয়ার নতুন ডি ফ্যাক্টো সরকারের সামরিক প্রশাসনের মুখপাত্র হাসান আবদেল ঘানি এ ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি জানান, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো বিলুপ্ত করা হয়েছে। এসব গোষ্ঠী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে একীভূত করা হবে।
ঘানির উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, সকল সামরিক গোষ্ঠী বিলুপ্ত করা হয়েছে এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একীভূত করা হয়েছে। এ ছাড়া বিলুপ্ত সরকারের সেনাবাহিনী এবং নিরাপত্তা সংস্থাসহ স্বৈরশাসক বাশার আল আসাদের দল বাথ পার্টিকেও বিলুপ্ত ঘোষণা করেন তিনি। গত মাসে আসাদ সরকারের পতনের পর রাজধানী দামেস্কে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এর আগে গত ৮ ডিসেম্বর বিদ্রোহী গোষ্ঠী এইচটিএসের হামলার মুখে পালিয়ে যান বাশার আল আসাদ। ২৭ নভেম্বর আলেপ্পোতে বিদ্রোহীরা অভিযান শুরু করার পর মাত্র ১২ দিনের মধ্যে দামেস্ক পর্যন্ত পৌঁছায়। এই আক্রমণের ফলে শুধু আসাদের পতন হয়নি, বরং তার বিদেশি মিত্র রাশিয়া ও ইরানও সামরিক ও কৌশলগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রাশিয়া ও ইরান দীর্ঘদিন ধরে আসাদ সরকারকে সমর্থন করে আসছিল। রাশিয়া বিমান হামলা চালিয়ে বিদ্রোহীদের দমন করত এবং ইরান সরাসরি সৈন্য ও সামরিক উপকরণ পাঠাত। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার সামরিক শক্তি ও মনোযোগ কমে গেছে।
এদিকে ইরান সমর্থিত গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক হামলায় দুর্বল হয়েছে, যার ফলে তারা সিরিয়া থেকে সৈন্য সরিয়ে নিতে শুরু করেছে। এ কারণে, সিরিয়ায় আসাদের সরকারের প্রতি বিদেশি সমর্থন কমে গেছে এবং বিদ্রোহীরা তা কাজে লাগিয়ে দ্রুত অগ্রসর হয়েছে।
বিদ্রোহীরা আলেপ্পো দখলের পর হামা, হোমস এবং শেষ পর্যন্ত দামেস্কে প্রবেশ করে। প্রেসিডেন্ট আসাদ রাশিয়ায় পালিয়ে যান। এটি তার শাসনের শেষ অধ্যায় হিসেবে দেখা হচ্ছে। আসাদ সরকারের পতনকে অনেকেই সিরিয়ায় ৫৪ বছর ধরে চলা বাথিস্ট শাসনের অবসান এবং নতুন এক যুগের সূচনা হিসেবে বিবেচনা করছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আসাদের পতনের প্রধান কারণ তার বিদেশি মিত্রদের দুর্বল হয়ে যাওয়া। রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্ত হওয়া এবং ইরান গাজার প্রতি মনোযোগ দেওয়ার ফলে বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম এই সময়টিকে কাজে লাগিয়ে সিরিয়ায় কৌশলগত আক্রমণ চালিয়েছে এবং বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে।
বিদ্রোহীরা সিরিয়ার ভবিষ্যতকে একটি নতুন, ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, সিরিয়া এখনো অস্থিতিশীল এবং দেশটির ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিশ্চিত নয়।
যদি রাশিয়া ও ইরান সম্পূর্ণভাবে পিছু হটে, তবে সিরিয়ায় ক্ষমতার ভারসাম্য আরও পরিবর্তিত হতে পারে। সিরিয়ার জনগণের জন্য এটি হয়তো মুক্তির বার্তা, কিন্তু স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
মন্তব্য করুন