যুদ্ধবিরতির পর গাজার লাখ লাখ উদ্বাস্তু তাদের বাড়িতে ফিরছেন। অথচ তাদের ঘরবাড়ি বলে কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। ইসরায়েলি আগ্রাসনে সব ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। ১৫ মাস আগেও যে সুন্দর সাজানো শহরে তারা প্রশান্তির নিঃশ্বাস নিয়েছেন তা এখন ধ্বংসস্তুপ। চারদিক শুধু ধুলোর মোটা আস্তরণে ঢাকা। যেন হাজার বছরের পরিত্যক্ত কোনো শহর কিংবা বিরাণভূমি।
বাড়িতে ফিরে তারা দেখছেন, বোমার আঘাতে ধ্বসে পড়া ঘরগুলো স্তুপ হয়ে আছে। কোনো কোনো বাড়ির শুধু ক্ষতবিক্ষত কাঠামোটাই দাড়িয়ে আছে, দেয়ালগুলো কোনো মস্ত দানবে খুলে নিয়েছে। অনেকে তাদের নিজ বাড়িটিই খুঁজে পাচ্ছেন না।
এর মধ্যেই একজন উদ্বাস্তু ফিলিস্তিনি নারী দেখলেন কয়েকটি বাড়ি অক্ষত দাড়িয়ে আছে। অবিশ্বাস নিয়ে তিনি তাকিয়ে থাকলেন একটি বাড়ির দিকে। না তিনি স্বপ্ন দেখছেন না, এটি তারই সাজানো ঘর। কংক্রিটের ভাঙা খন্ডের মধ্য দিয়ে তিনি দৌড়াতে থাকলেন বাড়িটির দিকে। গেট খুলে ভিতরে ঢুকেই তার অবিশ্বাস ভাঙলো। কান্নার সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর সিজদায় লুটিয়ে পড়লেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শেয়ার করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ওই ফিলিস্তিনি নারী একটি বাড়ির দিকে দৌড়াচ্ছেন এবং বলছেন ‘এটি আমার বাড়ি, এটি আমার বাড়ি’। বাড়ির বাহিরের গেট খুলে ভিতরে ঢুকলেন তিনি। এসময় বারবার তাকে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ উচ্চারণ করতে শোনা যায়।
ভিডিওতে দেখা যায়, বিসমিল্লাহ বলে তিনি বাড়িটির গেট খুলছেন এবং ভেতরে ঢুকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরমুহুর্তেই দেখা যায় তিনি মহান আল্লাহর সিজদায় লুটিয়ে পড়লেন এবং কান্না করতে থাকলেন।
মিস ফালাসতেনিয়া নামে একটি একাউন্ট থেকে ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছে। শেয়ার করার ৪৮ ঘন্টার মধ্যে এটি প্রায় ৮লাখ বার দেখা হয়েছে। ১২ হাজার মানুষ ভিডিওটিতে মন্তব্য করেছেন এবং তিন হাজার মানুষ এটি শেয়ার করেছেন।
I broke down into tears when I saw the first thing she did was praise God. SubhanAllah. pic.twitter.com/NscPDDsbwY — missfalasteenia (@missfalsteenia) January 27, 2025
উল্লেখ্য, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার মাত্র দুই দিনের মাথায় গাজার উত্তরাঞ্চলে ফিরে এসেছেন ৩ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি। ইসরায়েলি বাহিনীর আগ্রাসনের কারণে উত্তর গাজার বাসিন্দাদের বড় একটি অংশ এতদিন উপত্যকার দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছিলেন। অবশেষে ৪৭০ দিন পর তারা নিজেদের বাড়িঘরে ফিরে আসছেন।
এর আগে আলজাজিরার সংবাদদাতা জানিয়েছিলেন, উত্তর গাজায় ফিরতে বাধা দেওয়া হবে না ইসরায়েলের এমন ঘোষণার পর নেৎজারিম করিডোরের কাছে অপেক্ষারত হাজারো ফিলিস্তিনি আনন্দে ফেটে পড়ে। বাস্তুচ্যুতরা এই মুহূর্তটিকে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করে। তাদের মতে, যুদ্ধবিরতি ঘোষণার মতোই এটিও তাদের জন্য একটি বিজয়ের দিন।
ইসরায়েলি আগ্রাসনে পুরো এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলেও গাজার মানুষ তাদের নিজভূমি থেকে দূরে থাকতে রাজি নন। নিজেদের এলাকায় ফিরতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন বাসিন্দারা। সোমবার সকাল থেকেই নেৎজারিম করিডোর দিয়ে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি ঘরে ফিরতে শুরু করেন।
ধ্বংসস্তূপ ঘিরে হতাশ না হয়ে তারা আশায় বুক বাধছেন। তারা বলছে, তারা ধ্বংস হয়ে যাওয়া ঘরবাড়ি আবার তৈরি করবেন। এমনকি যদি বালি আর কাদামাটি দিয়েও করতে হয়, তবুও তারা তা করবেন। তবুও মাথা গোজার স্থানের সংকট নিয়ে চিন্তিত অনেক মানুষ।
হামাসের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, উত্তর গাজায় ফিরে আসা ফিলিস্তিনিদের জন্য সাময়িক আশ্রয় হিসেবে অন্তত ১ লাখ ৩৫ হাজার তাঁবুর প্রয়োজন।
মন্তব্য করুন