দীর্ঘ ১৫ মাস ধরে চলা সংঘাতের পর অবশেষে গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে হামাস ও ইসরায়েল। কাতারের প্রধানমন্ত্রীর সাথে হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে পৃথক বৈঠকের পর বুধবার (১৫ জানুয়ারি) উভয় পক্ষ গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের মুক্তি দেয়ার বিষয়ে চুক্তিতে সম্মত হয়।
এদিন রাতে কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান বিন জসিম আল–থানি দোহায় এক সংবাদ সম্মেলনে যুদ্ধবিরতির কথা নিশ্চিত করেন। আগামী ১৯ জানুয়ারি (রোববার) থেকে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে বলেও জানান তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির কথা নিশ্চিত করেছেন। কীভাবে এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হবে তাও তুলে ধরেন তিনি। হামাস এবং ইসরাইল যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হওয়ার পর হোয়াইট হাউজে এক ভাষণে বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছেন।
বাইডেন বলেন, তিন ধাপে এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হবে। প্রথম ধাপ ছয় সপ্তাহ স্থায়ী হবে। দ্বিতীয় ধাপে যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তি নিয়ে আলোচনা চলছে এবং তৃতীয় ধাপে হবে গাজার পুনর্গঠন নিয়ে আলোচনা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথম ধাপে ছয় সপ্তাহের একটি প্রাথমিক যুদ্ধবিরতির সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। এই সময়ে গাজা উপত্যকা থেকে ধীরে ধীরে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহার করে নেয়া হবে এবং হামাসের হাতে আটক বন্দিদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেয়া হবে।
চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম ধাপে ৩৩ জন ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দেবে হামাস, যাদের মধ্যে সব নারী, শিশু ও ৫০ বছরের বেশি বয়সি পুরুষরা রয়েছেন। এসময় রাফাহ সীমান্ত দিয়ে গাজায় প্রতিদিন ছয়শ ট্রাক ত্রাণ এবং চিকিৎসা সামগ্রী প্রবেশ করতে দেয়া হবে। গাজায় অবশিষ্ট হাসপাতালগুলোকে সচল রাখতে ৫০ টি জ্বালানী ভর্তি লরিও পাঠানো হবে।
গাজার জনবহুল এলাকা থেকে ইসরায়েলের সাথে গাজার সীমান্তের ৭০০ মিটার (২,২৯৭ ফুট) এর বেশি দূরে অবস্থিত এলাকায় ইসরায়েল তাদের বাহিনী প্রত্যাহার করবে। ইসরাইল বেসামরিক নাগরিকদের গাজার উত্তরে তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে দেবে।
ইসরায়েল আহত ফিলিস্তিনিদের চিকিৎসার জন্য গাজা ত্যাগের অনুমতি দেবে এবং প্রথম ধাপ বাস্তবায়ন শুরু হওয়ার সাত দিন পর মিশরের সাথে রাফাহ ক্রসিং খুলে দেবে। ইসরাইলি বাহিনী মিশর ও গাজার সীমান্তবর্তী ফিলাডেলফি করিডোরে তাদের উপস্থিতি হ্রাস করবে এবং চুক্তি কার্যকর হওয়ার ৫০তম দিনের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করবে।
চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে শর্ত পূরণ হলে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তির বিনিময়ে অবশিষ্ট সব জীবিত জিম্মিদের মুক্তি ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের বিষয় রয়েছে।
তৃতীয় ধাপে অবশিষ্ট মৃতদেহগুলোর ফেরত দেয়া এবং গাজা পুনর্গঠনের কাজ শুরুর কথা রয়েছে। এই কাজ পরিচালিত হবে মিশর, কাতার ও জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে।
মন্তব্য করুন