দীর্ঘ ১৫ মাস ধরে চলা সংঘাতের পর অবশেষে গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে হামাস ও ইসরায়েল। বুধবার যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে দুই পক্ষ ঐকমত্যে পৌঁছায় বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা। এই চুক্তির আওতায় গাজায় সংঘাত বন্ধের পাশাপাশি উপত্যকাটিতে হামাসের হাতে বন্দী জিম্মিদের মুক্তির পথও খুলবে।
দীর্ঘ কয়েক মাস আলোচনার পর এই চুক্তিতে পৌঁছলো উভয় পক্ষ, যার অন্যতম মধ্যস্থতাকারী ছিল কাতার। এছাড়া মিশর এবং যুক্তরাষ্ট্রও এই যুদ্ধবিরতির সমর্থনে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে।
আলোচনার সাথে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, কাতারের প্রধানমন্ত্রীর সাথে হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে পৃথক বৈঠকের পর উভয় পক্ষ গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের মুক্তি দেয়ার বিষয়ে চুক্তিতে সম্মত হয়েছে।
গাজার প্রধান ফিলিস্তিনি সশস্ত্র স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস জানিয়েছে, হামাসের প্রতিনিধিদল মধ্যস্থতাকারীদের কাছে যুদ্ধবিরতি চুক্তি এবং বন্দীদের ফেরতের বিষয়ে তাদের সম্মতি জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, হামাস চুক্তির মৌখিক সম্মতি দিয়েছে এবং চূড়ান্ত লিখিত সম্মতি দেওয়ার জন্য আরও তথ্যের অপেক্ষায় রয়েছে।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিয়ন সা’আর জানিয়েছেন, তিনি ইউরোপ সফর সংক্ষিপ্ত করে আজ রাতেই ইসরায়েল ফিরে আসছেন। ফিরেই তিনি নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা ও সরকারের ভোটে অংশ নেবেন। সম্ভবত আগামীকাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
যুদ্ধবিরতির খবর জানার পর গাজায় ফিলিস্তিনিদের অনেককে রাস্তায় উল্লাস করতে দেখা গেছে। মধ্য গাজার দেইর আল–বালাহ ও অন্যান্য এলাকায় জড়ো হন হাজার হাজার মানুষ। আনন্দে তারা একেঅপরকে জড়িয়ে ধরেন। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে অনেককে মুঠোফোনে ছবি তুলতে দেখা যায়।
বিবিসির গাজা সংবাদদাতা রুশদি আবুআলুফ বলছেন, এই চুক্তির ফলে গাজা শহর এবং দক্ষিণ গাজা থেকে লক্ষ লক্ষ বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা এখন তাদের নিজেদের ঘরে ফিরে যেতে পারবেন। একইসঙ্গে চু্ক্তির আওতায় হামাস ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেবে।
ফিলিস্তিনিদের জন্য চুক্তির অন্যতম দিক হলো, এর ফলে রাফাহ সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন ছয়শ ট্রাক ত্রাণ এবং চিকিৎসা সামগ্রী প্রবেশ করতে দেয়া হবে। গাজায় অবশিষ্ট হাসপাতালগুলোকে সচল রাখতে ৫০ টি জ্বালানী ভর্তি লরিও পাঠানো হবে বলে জানা যাচ্ছে।
জানা গেছে, কয়েকটি পর্যায়ে এই চুক্তিটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রথম পর্যায়ে ছয় সপ্তাহের একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকবে। এই সময়ে হামাস ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেবে। প্রতিজন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেয়ার বিনিময়ে ইসরায়েল বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনী বন্দিকে মুক্তি দেবে।
এদিকে চু্ক্তির পর যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন ‘এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র নভেম্বরের ঐতিহাসিক বিজয়ের কারণে।’ এর আগে নিজের সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লেখেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে জিম্মিদের জন্য আমরা একটি চুক্তি করছি। তারা খুব দ্রুতই মুক্তি পাবে।’
মন্তব্য করুন