ইরানের সেনাবাহিনীর শক্তিশালী ও উচ্চপ্রশিক্ষিত ইসলামি বিপ্লবী রক্ষীবাহিনী (আইআরজিসি) এক হাজার নতুন ও অত্যাধুনিক ড্রোন হাতে পেয়েছে। সোমবার (১৩ জানুয়ারি) ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম তাসনিম এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
তাসনিমের বরাত দিয়ে জেরুজালেম পোস্ট জানিয়েছে, এই ড্রোনগুলো ইরান মূলত ‘চিরশত্রু’ ইসরায়েল এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন নতুন মার্কিন প্রশাসনের চাপ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত করেছে।
ইরানের বিভিন্ন অঞ্চলে এই ড্রোনগুলো বিতরণ করা হয়েছে। ড্রোনগুলোতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যা সামরিক অভিযানে বড় ধরনের সুবিধা দেবে।
ড্রোনের অনন্য বৈশিষ্ট্য
এই ড্রোনগুলোতে রয়েছে বেশ কয়েকটি আধুনিক ফিচার:
দীর্ঘ পাল্লা : ২,০০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে সক্ষম।
উচ্চ ধ্বংসক্ষমতা : লক্ষ্যবস্তুতে সুনির্দিষ্টভাবে আঘাত হানতে পারে।
রাডার ফাঁকি : শত্রুপক্ষের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে অকার্যকর করতে সক্ষম।
স্বয়ংক্রিয় আঘাত হানার ক্ষমতা : নিজে উড়ে গিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে পারে।
গোয়েন্দা ও সামরিক শক্তি বৃদ্ধি
তাসনিমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, এই নতুন ড্রোনগুলো আইআরজিসির নজরদারি ও গোয়েন্দা কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য উন্নতি এনেছে। একইসঙ্গে দূরবর্তী লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানোর ক্ষেত্রে আরও শক্তিশালী হয়েছে সেনাবাহিনী।
ইরানের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি
এই ড্রোনগুলো ইরানের অভ্যন্তরীণ প্রযুক্তিতে তৈরি। দেশটির সামরিক বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী এবং উদ্ভাবকদের দীর্ঘ গবেষণার ফল এটি।
নতুন আত্মঘাতী ড্রোন উন্মোচন ও সামরিক মহড়া
গত সপ্তাহে ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় একটি নতুন আত্মঘাতী ড্রোন উন্মোচন করেছে, যার নাম দ্য রাজওয়ান। একইসঙ্গে, ইরান দুই মাসব্যাপী সামরিক মহড়া চালিয়ে যাচ্ছে। এতে তারা গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোকে সুরক্ষিত রাখার কৌশল অনুশীলন করেছে।
ক্ষেপণাস্ত্র শহরের প্রদর্শনী
সামরিক মহড়ার অংশ হিসেবে ইরানের গার্ডস কমান্ডার-ইন-চিফ মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি একটি নতুন ভূগর্ভস্থ ‘ক্ষেপণাস্ত্র শহর’ পরিদর্শন করেছেন। টেলিভিশনে প্রচারিত এক বক্তব্যে তিনি ইরানের শত্রুদের সতর্ক করে বলেছেন, ‘আমাদের ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা এখন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি শক্তিশালী।’
পরমাণু চুক্তি ও সাম্প্রতিক পরিস্থিতি
২০১৫ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইরানের সঙ্গে একটি পরমাণু চুক্তি করেছিলেন। এতে ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সীমিত করার বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে। তবে ২০১৮ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তি থেকে সরে যান।
নতুন ড্রোন সংযোজন এবং সামরিক মহড়ার মাধ্যমে ইরান তার সামরিক শক্তি আরও বাড়িয়েছে। এই উন্নয়ন মধ্যপ্রাচ্যে নতুন সামরিক প্রতিযোগিতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
মন্তব্য করুন