ফিলিস্তিনিদের জলপাই গাছ কেটে ফেলছে দখলদার ইহুদিরা। তাতে সহায়তা করছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। সংবাদ সংস্থা ওয়াফার বরাতে এমন তথ্য জানিয়েছে আলজাজিরা।
রোববারের (১২ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জর্ডান উপত্যকায় ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা জলপাই গাছ কেটে ফেলছে। গত শুক্রবার রাতে অধিকৃত পশ্চিম তীরের উত্তর জর্ডান উপত্যকার বারদালা গ্রামের কাছে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা হামলা চালায়। তারা ফিলিস্তিনি জলপাই গাছ এবং কৃষিজমির ব্যাপক ক্ষতি করে। এ সময় ইহুদি বাসিন্দাদের অকাজ নির্বিঘ্ন করতে পাশে ছিল ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। সেনারা ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ রোধে গাছ কর্তনকারীদের পাহারা দিয়ে রাখে।
ওয়াফা জানিয়েছে, বসতি স্থাপনকারীরা প্রায় ১০ ডুনাম (২.৪ একর) এলাকায় আক্রমণ করেছে। সাম্প্রতিক আক্রমণের ধারাবাহিকতায় এটি সর্বশেষ, যা ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের কাছাকাছি একটি নতুন ফাঁড়ি স্থাপনের পর আরও ঘন ঘন ঘটেছে।
দখলকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলিদের লোলুপ দৃষ্টিতে থাকা এলাকাগুলোর একটি উত্তর জর্ডান উপত্যকা। এখানে বহু জলপাই গাছ রয়েছে। এ ছাড়া উপত্যকাটিতে অন্যান্য ফল ও সবজি চাষ হয়। এক কথায়, পশ্চিম তীরের সবচেয়ে উর্বর ভূমি অঞ্চলের একটি এই উপত্যকা। এখানে উৎপাদিত কৃষি পণ্য সারা ফিলিস্তিনের চাহিদার বড় একটি অংশ মেটায়।
দখলদাররা কেন এমনটি করছে তার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, উপত্যকাটিতে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি অত্যাচারের একটি ধরন জলপাই গাছ কর্তন। অবৈধ বসতি স্থাপনকারী এবং সৈন্যরা এখান ফসল ধ্বংস করছে, জমি পুড়িয়ে দিচ্ছে এবং ফিলিস্তিনিদের তাদের জমি ছেড়ে যেতে বাধ্য করার জন্য ফলদায়ক গাছ উপড়ে ফেলছে। শুধু তাই নয়, যেসব গাছ অক্ষত রয়েছে সেসবের ফল সংগ্রহ করতে দিচ্ছে না। ইসরায়েলি সেনাদের পাহারায় ফল নিয়ে যাচ্ছে ইহুদিরা।
এছাড়া ইসরায়েলি-অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লাহর কাছে বুরকায় ইসরায়েলি সেনারা ফিলিস্তিনি কৃষকদের জলপাই চাষের অনুমতি দিচ্ছে না। এতে সেখানে নতুন গাছ লাগানোর সুযোগ নেই ফিলিস্তিনিদের। পুরোনো গাছে যথারীতি ফল এলেও প্রায় তারা সেসব সংগ্রহ করতে পারেন না। সেনাদের পাহারায় ইহুদিরা এসে সেসব গাছের জলপাই নিয়ে যায়।
ইসরায়েলিদের এরূপ অত্যাচারের একটাই উদ্দেশ্য। যাতে বাধ্য হয়ে ফিলিস্তিনিরা অন্যত্র সরে যান। কারণ, জলপাই গাছনির্ভর বহুজন ফল সংগ্রহ করতে না পেরে বা গাছ হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বছরের পর বছর অত্যাচার সইতে না পেরে শেষমেশ জীবিকার তাগিদে অন্যত্র সরে গেলেই তাদের বাড়ি ও জমি দখল করবে ইহুদিরা।
এদিকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে এখনো লড়াই অব্যাহত রেখেছেন স্বাধীনতাকামীরা। যার প্রমাণ মেলে ইসরায়েলি বাহিনীর শনিবারের (১১ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, উত্তর গাজা উপত্যকায় লড়াইয়ে তাদের চার সৈন্য নিহত এবং ছয়জন আহত হয়েছে। এ নিয়ে হামাসের বিরুদ্ধে স্থল আক্রমণ শুরুর পর গাজায় ইসরায়েলি সেনা নিহতের সংখ্যা ৪০২-এ পৌঁছাল। খবর দ্য টাইমস অব ইসরায়েলের।
আইডিএফ ওই ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত শেষ করেছে। তাদের তথ্যমতে, উত্তর গাজার বেইত হানুনে সৈন্যদের ওপর বন্দুকধারীরা হামলা করে। স্বাধীনতাকামীরা একটি বিস্ফোরক ডিভাইস ছুড়ে মারলে ওই হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ সময় ইসরায়েলি বাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলিও চালিয়েছিল তারা।
আইডিএফ সম্প্রতি গাজা উপত্যকার উত্তরে হামাসের বিরুদ্ধে তাদের হামলা জোরদার করেছে। গত কয়েক মাসে তারা জাবালিয়া এবং বেইত লাহিয়ায় ব্যাপক স্থল অভিযান চালায়। সেখানে নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞের পর এখন তারা বেইত হানুন এলাকায় আক্রমণ শুরু করেছে। এ এলাকায় ব্যাপক অভিযানের মধ্যে প্রতিরোধের মুখে পড়ল নেতানিয়াহুর বাহিনী। তবে সেনা হারিয়ে পিছু হটছে না ইসরায়েলি বাহিনী। প্রতিরোধকারী স্বাধীনতাকামীদের নির্মূলে আরও বড় ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছে দখলদাররা।
মন্তব্য করুন