ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলা গত তিন দিনে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সময়ের মধ্যে দুই শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
রোববার (০৫ জানুয়ারি) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, একদিনে ৮৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজা সিটির আল-ঘৌলা এলাকায় ইসরায়েল একটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে একসঙ্গে ১৭ জনকে হত্যা করেছে। নিহতরা সবাই বেসামরিক ব্যক্তি এবং তাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা বেশি।
ইসরায়েল দাবি করেছে, গত দুই দিনে তারা গাজায় ১০০টিরও বেশি হামলা চালিয়েছে এবং সেসব হামলার লক্ষ্য ছিল সশস্ত্র যোদ্ধা। তবে বাস্তবে এই দাবি সঠিক নয়, কারণ হামলাগুলোর মধ্যে অনেকেই নিরীহ সাধারণ মানুষ ছিলেন। উদ্ধারকারীরা জানায়, ধ্বংসস্তূপের নিচে বহু শিশুর মরদেহ উদ্ধার হয়েছে।
গাজায় এই সহিংসতা চলার মধ্যে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা আবারও শুরু হয়েছে। সৌদি সংবাদমাধ্যম আল-আরাবি আল-জাদেদ জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে এবং হামাস ও ইসরায়েল কিছু বিষয়ের ওপর একমত হতে পেরেছে। সোমবার (০৬ জানুয়ারি) কাতারের দোহায় ইসরায়েলের গোয়েন্দা প্রধান ডেভিড বার্নেয়া পরবর্তী আলোচনায় অংশ নিতে পারেন।
এদিকে, গাজায় চলমান এই সংকটের মধ্যে, যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ৮০০ কোটি ডলারের অস্ত্র ইসরায়েলকে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই অস্ত্রের মধ্যে এমন বোমা রয়েছে, যেগুলো গাজার মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করতে ব্যবহৃত হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বারবার ইসরায়েলকে অস্ত্র না দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আবেদন জানালেও, বাইডেনের প্রশাসন সেই আবেদন উপেক্ষা করেছে।
হামাসও বারবার যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে, তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন হামাসকে দোষারোপ করেছেন। তিনি বলেছেন, হামাস যদি অস্ত্র ছাড়ে এবং আত্মসমর্পণ করে, তাহলে যুদ্ধবিরতি সম্ভব হতে পারে। কিন্তু হামাস এই প্রস্তাব মানছে না এবং যুদ্ধবিরতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এদিকে, গাজার মানবিক পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েল গাজায় মানবিক সাহায্য কমিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। তারা বলছে, যদি গাজায় বেশি ত্রাণ যায়, তাহলে হামাস তা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বিতরণ করবে। ফলে গাজার সাধারণ মানুষকে সাহায্য পৌঁছানো আরও কঠিন হয়ে পড়বে।
মধ্যপ্রাচ্যে চলমান এই সংঘাতের মধ্যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ নেওয়ার পর আরও উত্তেজনা তৈরি হতে পারে, কারণ ট্রাম্পের সরকারের সময় ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সমর্থন ছিল ব্যাপক। ট্রাম্পের শপথের পর ইসরায়েল আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে, যা গাজার মানুষের জন্য আরও খারাপ হতে পারে।
মন্তব্য করুন