ইসরায়েলি বাহিনী গাজার দুটি হাসপাতালে হামলার হুমকি দিয়েছে। তারা সেখান থেকে রোগী ও চিকিৎসকদের অবিলম্বে সরে যাওয়ার নির্দেশ জারি করেছে। ওই দুটি হাসপাতালের অনেকেই এসেছেন ধ্বংসপ্রাপ্ত কামাল আদওয়ান হাসপাতাল থেকে।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণের হুমকিতে রয়েছে উত্তর গাজার সবচেয়ে জটিল দুটি হাসপাতাল। সেখান থেকে অবিলম্বে কর্মী ও রোগীদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে তারা। অথচ জাতিসংঘ অবরুদ্ধ অঞ্চলে চিকিৎসা সুবিধার ওপর হামলা বন্ধ করার জন্য ইসরায়েলকে অনুরোধ করেছে। কিন্তু পরিস্থিতি বলছে, ইসরায়েল সে অনুরোধ এবারও রাখবে না।
শুক্রবার ইসরায়েলি সৈন্যরা বেইত লাহিয়ার ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতাল ঘেরাও করে। যেখানে অনেক বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছে।
মধ্য গাজার দেইর এল-বালাহ থেকে সংবাদ সংগ্রহ করা আল জাজিরার হানি মাহমুদের মতে, জাবালিয়ার আল-আওদা হাসপাতালেরও একই পরিস্থিতি। সেখানেও একটি পৃথক স্থানান্তর আদেশ জারি করা হয়েছে।
গত সপ্তাহে কামাল আদওয়ান হাসপাতালে হামলা চালায় ইসরায়েল। তারা সেটি প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। ইসরায়েলি বাহিনীর বারবার আক্রমণের মধ্যে গাজা উপত্যকায় স্বাস্থ্যসেবা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে। এদিকে ওই দুটি হাসপাতালে হামলা নতুন কিছু হবে না। কারণ, ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বারবার ইসরায়েলি হামলার কারণে ইন্দোনেশিয়ান এবং আল-আওদা হাসপাতাল উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সাংবাদিক মাহমুদ বলেন, যারা দুই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বা আশ্রয় চেয়েছেন তাদের অনেকেই বিধ্বস্ত কামাল আদওয়ান হাসপাতাল থেকে এসেছেন। আমরা খুব সংকটাপন্ন লোকদের বিষয়ে কথা বলছি। তাদের চিকিৎসা দরকার। আধুনিক সরঞ্জাম দরকার। এখনই তাদের কোথাও রাখা জরুরি। তাদের মধ্যে অনেকেই গুরুতর আহত।
গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গণহত্যা অব্যাহত রেখেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর শুরু হওয়া যুদ্ধে ফিলিস্তিনি নিহতের সংখ্যা ছাড়াল ৪৫ হাজার ৬০০। যাদের বেশিরভাগ নারী ও শিশু। যদিও ইসরায়েল দাবি করে আসছে, হামাসের সন্ত্রাসী ঘাঁটি লক্ষ্য করে অভিযান চলছে। এতে হামাস যোদ্ধারা নিহত হচ্ছেন। যোদ্ধারা বেসামরিক লোকদের মধ্যে অবস্থান করায় বা তাদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করায় হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে।
কিন্তু আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বহু প্রমাণ উপস্থাপন করেছে। যেখানে ইসরায়েলি বাহিনী বেসামরিক লোকদের লক্ষ্য করে সুনির্দিষ্ট হামলা চালায়।
প্রসঙ্গত, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন চলছে এক বছরের বেশি সময় ধরে। এতে এ উপত্যকার প্রায় শতভাগ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। স্থানীয়দের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। অধিকাংশ ফিলিস্তিনি খোলা আকাশের নিচে ধ্বংসস্তূপের ওপর তাঁবু খাটিয়ে বসবাস করছে। এর মধ্যে ডিসেম্বরের শেষ থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। এ পরিস্থিতির মধ্যে তীব্র শীত ও তুষারপাতে ঠান্ডায় জমে গিয়ে সেখানে এক সপ্তাহে অন্তত সাত শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
মন্তব্য করুন