কোনো ধরনের বড় পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়াই সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদের পতন দেখল ইরান। এক সময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্রকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি উপসাগরীয় দেশটি। বিশ্লেষকদের মতে, এর পেছনে যে কারণ, তার জন্য দায়ী বাশার আল আসাদ নিজেই।
দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে চলা গৃহ যুদ্ধের মধ্যেও আসাদ যে টিকে ছিলেন, তার কৃতিত্বটা অবশ্যই ইরান ও রাশিয়ার। আসাদ রেজিমকে এককভাবে সবচেয়ে বেশি সহায়তা দিয়েছে তেহরান। কিন্তু আসাদ সরকার সুযোগ পেয়ে বিরোধীদের সঙ্গে বসে রাজনৈতিক মীমাংসা যেমন করতে পারেননি, তেমননি ধরে রাখতে পারেননি ঘনিষ্ঠ মিত্র ইরানকেও। ফলে, বসে বসে আসাদের পতন দেখা ছাড়া সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসেনি তেহরান। কিন্তু কেন?
এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যম মিডলইস্ট আইয়ে একটি নিবন্ধ লিখেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাজেদ মানদুর। নিবন্ধে তিনি লিখেন—আসাদের পতনের সবচেয়ে সুস্পষ্ট শিক্ষা হচ্ছে, বিদেশি পৃষ্ঠপোষকদের ওপর নির্ভর করা এবং সেই সমর্থন কখনো শেষ হবে না, এটা বিশ্বাস করা বড় ভুল। বাশার আল আসাদের ক্ষেত্রে এটা ছিল অনিবার্য এক পরিণতি। আসাদ ইরানের কাছ থেকে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছিলেন। তার মধ্যে এই আত্মবিশ্বাস জন্মে ছিল যে প্রতিরোধের অক্ষের তিনি একটা অপরিহার্য অংশ।
উদাহরণ হিসেবে মাজেদ মানদুর উল্লেখ করেন- গেল ১৩ বছরে সিরিয়াতে ৩০–৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করে ইরান। এটা ২০২৩ সালে ইরানের মোট জিডিপির সাড়ে ৭ থেকে সাড়ে ১২ শতাংশ। নিষেধাজ্ঞায় থাকা একটা দেশের জন্য এটা নিশ্চিত করেই বিশাল অঙ্ক। এই বিশাল বিনিয়োগ আসাদের মধ্যে তার অপরিহার্যতা নিয়ে একটা বিভ্রম তৈরি করেছিল বলে দাবি তার।
এই রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, আসাদ ভেবে নিয়েছিলেন— তার অবস্থান সুরক্ষিত। সে কারণে ইরানকে উপেক্ষা করে আরব বিশ্বে নিজেকে পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রচেষ্টা শুরু করেন আসাদ। তিনি ভেবেছিলেন—উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে সিরিয়ায় বিনিয়োগের বন্যা বয়ে যাবে। কিন্তু বিষয়টি বুঝতে পেরে আসাদের ওপর থেকে সহায়তার হাত গুটিয়ে নেয় তেহরান।
নিবন্ধে দাবি করা হয়—ইরান ও ইসরায়েলের সংঘাতে তেহরানের পক্ষে সক্রিয় অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকেন আসাদ। এমনকি সিরিয়ার মাটিতে যখন ইরানের উচ্চপদস্থ কমান্ডারদের হত্যা করা হচ্ছিল, তখন ইরানের দিক থেকে এই উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল যে সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর দিক থেকে গোয়েন্দা তথ্য ফাঁস হচ্ছে কি না? কিন্তু তেহরানের সেই উদ্বেগ দূর করতে পারেননি আসাদ।
আসাদের ক্ষমতার গ্যারান্টার ছিল তার সেনাবাহিনী। কিন্তু আসাদ তার সেনাদের খুব অল্পই বেতন দিতেন। ফলে টিকে থাকার জন্য ব্যাপক দুর্নীতির ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠেছিল সিরিয় সেনারা। এটা সেনাবাহিনীকে কার্যকর একটি লড়াকু বাহিনীতে পরিণত করতে ব্যর্থ হয় এবং তার পতনের জন্য পথ তৈরি করে দেয়।
ইরানের কৌশলগত মিত্র রাশিয়ার মধ্যস্থতায়, তুরস্কের সঙ্গে সিরিয়ার সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ব্যাপারেও আসাদ ক্রমাগত প্রত্যাখ্যান করে গিয়েছিলেন। দেশের মধ্যে বিরোধীদের সঙ্গে এবং বাইরে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের সঙ্গে সমঝোতা করতে না পারার ব্যর্থতা আসাদের পতনের পথ তৈরি করে। প্রকৃতপক্ষে, আঙ্কারার সঙ্গে আসাদ যদি সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে পারতেন, তাহলে তুরস্কের কৌশলগত সমর্থন ও অনুমোদন ছাড়া বিরোধীদের পক্ষে আক্রমণ করা অনেক কঠিন হতো।
মন্তব্য করুন