ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলের বর্বর হামলা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অব্যাহত রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ইতোমধ্যেই কাতারের দোহায় পুনরায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস এবারের যুদ্ধবিরতি আলোচনা বিষয়ে বেশ আশাবাদী। তাদের বিশ্বাস, ইসরায়েল যদি নতুন করে কোনো শর্ত আরোপ না করে, তবে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়ন সম্ভব।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল- সিএনএন এর এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে হামাস তাদের অফিসিয়াল বিবৃতিতে জানায়, গাজা উপত্যকায় বন্দি বিনিময় এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়ণ করা সম্ভব, তবে কিছু বাধা এখনো রয়ে গেছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কর্মকর্তারা, যেমন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, কাতার এবং মিসর যুদ্ধবিরতির আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখছেন। তবে, এখনো চুক্তি চূড়ান্ত হয়নি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএ পরিচালক বিল বার্নস কাতারে গিয়ে আরও আলোচনা করবেন।
এ বিষয়ে ইসরায়েলি এক কর্মকর্তা জানান, যুদ্ধবিরতি চুক্তি হতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইসরায়েল নতুন শর্ত আরোপ করছে যা আলোচনা বাধাগ্রস্ত করছে। তারা জানিয়েছে, শর্তগুলো প্রত্যাহার না করলে চুক্তি করা কঠিন হবে।
পরিস্থিতি যখন এই তখন কাতারের দোহায় হামাস এবং ইসরায়েলের প্রতিনিধিরা পরোক্ষভাবে আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। আলোচনায় মূল বিষয় হচ্ছে গাজায় পূর্ণ যুদ্ধবিরতি এবং বন্দিদের বিনিময়। ২০২৩ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রস্তাবিত তিন-ধাপে চুক্তির মতো আলোচনার বিষয়গুলোর মধ্যে গাজার সব বসতি এলাকা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহার এবং কিছু বন্দি মুক্তির প্রস্তাবটি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে।
তবে ইসরায়েলি সেনাদের গাজা উপত্যকায় থাকার শর্ত হামাসের জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। হামাস বারবার বলেছে, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহার না হলে তারা বন্দি মুক্তির প্রস্তাব মেনে নেবে না।
ইতোমধ্যে, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান ইসরায়েল, মিসর ও কাতার সফর করেছেন এবং বলেছেন, এই মাসের মধ্যেই চুক্তি শেষ করার লক্ষ্যে তারা কাজ করছেন।
তবে, আলোচনা চলাকালীন সহিংসতা ও অস্থিরতা বাড়ছে, যার ফলে গাজার মানুষের প্রাণহানি অব্যাহত রয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন এবং ১ লাখ ৬ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন।
হামাস ও ইসরায়েলি বাহিনীর দীর্ঘ আলোচনার পর, এখনো যুদ্ধবিরতি চুক্তির বাস্তবায়ন আশা করা হচ্ছে। তবে, শেষ পর্যন্ত এ চুক্তি বাস্তবায়নে কিছু সময় লাগতে পারে। হামাস জানিয়েছে, তারা চায় সম্পূর্ণ ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার এবং বন্দি বিনিময় ছাড়া অন্য কোনো চুক্তি মেনে নেওয়া হবে না।
এদিকে, গাজার মানবিক সংকট আরও গভীর হচ্ছে। ইসরায়েলি হামলা এবং হাসপাতালগুলোর করুণ অবস্থা মানবিক বিপর্যয় তৈরি করেছে। তাই দ্রুত যুদ্ধবিরতি এবং শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন ছাড়া গাজার পরিস্থিতি উন্নতি করা সম্ভব নয়।
মন্তব্য করুন