গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে ঠিক তখনই ফিলিস্তিনিদের দুঃসংবাদ দিয়েছে ইসরায়েল। দেশটি জানিয়েছে ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুতদের উত্তর গাজায় ফিরতে দেওয়া হবে না।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) আনাদোলু এজেন্সির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী উত্তর গাজায় বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে বাধা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।
দেশটির সংবাদমাধ্যম ইহোদিয়থ অহরনথ জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজার ৭০ হাজার বাসিন্দার মধ্যে প্রায় ৬৫ হাজার বাসিন্দাকে বাস্তুচ্যুত করেছে। বর্তমানে এসব বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি স্কুল এবং ক্লিনিকের মতো বড় বড় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।
প্রতিবেদনে জানতে চাওয়া হয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী কি হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে জাবালিয়া এবং এর আশেপাশের শহরগুলোতে তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে দেবে? নাকি জাবালিয়া এবং আশপাশের শহরে নিজেদের বাড়িঘরে ফিরতে বাধা দেবে। যদিও ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার কারণে এসব বাড়িঘরের বেশির ভাগ ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সেনাবাহিনীর ধারণা, এখনো উত্তরাঞ্চলীয় শহর জাবালিয়া, বেইত লাহিয়া এবং বেইত হ্যানউনে প্রায় ১০০ জনের মতো যোদ্ধা রয়েছেন।
ইসরায়েলি এ সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, গত বছর তেলআবিব এক মিলিয়ন ফিলিস্তিনিকে দক্ষিণ গাজায় ফিরে যেতে বাধা দিয়েছিল। রাজনৈতিক নেতৃত্বে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকার উত্তর-তৃতীয়াংশকে বিধ্বস্ত ও পরিত্যক্ত এলাকা ঘোষণা করবে।
ইহোদিয়থ অহরনথ জানিয়েছে, সেনাবাহিনীর এ অভিযানের লক্ষ্য হলো গাজার বাসিন্দাদের জাবালিয়া, বেইত হ্যানউন ও বেইট লাহিয়াতে তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে বাধা দেওয়া। একইভাবে তারা ইসরায়েলি বসতি স্থাপন করে নেটিভ হাআসারা, সেদেরত, মেফালসিম এবং এরেজ নিজেদের দখলে নিয়েছে।
উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় এক বছরের বেশি সময় ধরে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। দেশটির অব্যাহত এ হামলায় সৃষ্ট ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করতে অন্তত ১৫ বছর সময় লাগবে। এজন্য প্রতিদিন ১০০টি লরি ব্যবহার করতে হবে।
জাতিসংঘের হিসাব মতে, গাজায় ভবন ধসে এ পর্যন্ত ৪২ মিলিয়ন টনেরও বেশি ধ্বংসস্তূপ জমা হয়েছে। এ ধ্বংসস্তূপগুলো যদি একসঙ্গে এক জায়গায় রাখা যায়, তাহলে তা মিশরের ১১টি গ্রেট পিরামিডের সমান হবে। এ ধ্বংসস্তূপ সরাতে ব্যয় হবে ৫০০ থেকে ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি)।
ইউএন এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামের হিসাব অনুসারে, গাজায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৭টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা অঞ্চলটির মোট ভবনের অর্ধেকের বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এ ছাড়া এক-দশমাংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এক-তৃতীয়াংশ বেশ খানিকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ভবনের ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ফেলার জন্য ২৫০ থেকে ৫০০ হেক্টর জমির প্রয়োজন পড়বে।
গাজাভিত্তিক জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘অবকাঠামোর যে পরিমাণ ক্ষতি করা হয়েছে, তা পাগলামির পর্যায়ে পড়ে... দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে একটি ভবনও নেই যেখানে ইসরায়েল হামলা চালায়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত অর্থেই এ অঞ্চলের ভৌগোলিক চিত্র পরিবর্তিত হয়ে গেছে। যেখানে আগে পাহাড় ছিল না, এখন সেখানে পাহাড় হয়ে গেছে। দুই হাজার পাউন্ডের বোমাগুলো আক্ষরিক অর্থেই এ অঞ্চলের মানচিত্র বদলে দিয়েছে।’
মন্তব্য করুন