নারীদের জন্য নতুন করে হিজাব আইন (বাধ্যতামূলক পোশাকবিধি) চালু হতে যাচ্ছে ইরানে, যার মধ্যে কঠোর শাস্তির বিধান করেছে। এই আইনে বলা হয়েছে, যদি কোনো নারী হিজাব পরতে অস্বীকার করেন, তবে তাকে মৃত্যুদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হতে পারে।
এ ছাড়া- ‘শালীনতা ও হিজাবের সংস্কৃতি’ নামে পাস হওয়া এই আইনে সাড়ে ১২ হাজার ইউরো পর্যন্ত জরিমানা (প্রতি ইউরো বাংলাদেশি ১১৪ টাকায় প্রায় ১৩ লাখ ৬৬ট্টি হাজার টাকা), বেত্রাঘাত এবং দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ডের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন এই আইনটির ৩৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী, যারা বিদেশি মিডিয়া বা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে ‘অশ্লীলতা, হিজাব উন্মোচন’ বা ‘অসামঞ্জস্যপূর্ণ পোশাক’ প্রচারে সহায়তা করবেন, তাদের ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং সাড়ে ১২ হাজার ইউরো জরিমানা হতে পারে। এর ফলে, বিদেশে বা আন্তর্জাতিক মহলে ইরানি নারীদের প্রতিবাদ প্রচার করলেও তারা শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন।
নতুন আইনে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, ট্যাক্সিচালক, মিডিয়া এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও শাস্তি ও জরিমানার আওতাধীন হবে। যদি তারা নারীদের বিরুদ্ধে এই আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ জানাতে ব্যর্থ হয়, তাদেরও শাস্তি পেতে হবে।
প্রেসিডেন্টের সতর্কতা
এদিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান এই নতুন আইনটির বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে সতর্কতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, এ আইন বাস্তবায়িত হলে সরকারের প্রতি জনগণের আরও অসন্তোষ বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। নুতন এই আইনটি প্রস্তাবনার সময় তিনি এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন ইরানের এক গণমাধ্যমে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিক্রিয়া
নতুন এ আইন নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, এই আইন নারীদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকে মৃত্যুদণ্ডের ঝুঁকিতে ফেলছে। অ্যামনেস্টি এই আইনের সমালোচনা করে বলেছে, এটি নারীদের স্বাধীনতার ওপর এক কঠোর দমনমূলক পদক্ষেপ।
আইনের বিরোধিতা
ইরানের সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, ধর্মীয় নেতা এবং আইনজীবীরা এই আইনের তীব্র বিরোধিতা করছেন। তারা বলছেন, এই আইন নারীদের স্বাধীনতা হরণের একটি অংশ, যা ইরানে চলমান ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’ আন্দোলনকে আরও কঠিন করে তুলবে। বিশেষত, যারা হিজাব পরার বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছেন, তারা আরও বেশি বিপদে পড়বেন।
মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর উত্তেজনা
নতুন আইনটি ২০২২ সালে ইরানে মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর শুরু হওয়া ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আসছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সেই সময় থেকে ইরানি নারীরা হিজাব বিরোধী প্রতিবাদে অংশ নিতে শুরু করেন। তাদের আন্দোলন সারা বিশ্বে ভাইরাল হয়ে ওঠে এবং সরকারী পোশাকবিধি ভঙ্গ করায় অনেক নারী শাস্তির মুখে পড়েছেন।
‘হিজাব ক্লিনিক’ এবং সরকারের পদক্ষেপ
এদিকে, ইরান সরকার জানিয়েছে, নারীদের জন্য ‘হিজাব ক্লিনিক’ চালু করবে, যেখানে তারা তাদের আইন লঙ্ঘনের কারণে চিকিৎসা নিতে পারবেন। এই ক্লিনিকের মাধ্যমে নারীদের ওপর আরও শাসন চাপানো হবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই আইনটি ইরানের শাসকগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে নারীদের ওপর আরও কঠোর শাসন আরোপের একটি প্রচেষ্টা। তারা মনে করছেন, এই আইনের মাধ্যমে নারীদের স্বাধীনতা আরও কমিয়ে দেওয়া হবে এবং তাদের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো হবে।
আইনটি ইরানে নারীদের জন্য একটি কঠোর দমনমূলক ব্যবস্থা, যা তাদের অধিকার এবং স্বাধীনতার জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে, প্রেসিডেন্ট এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই আইনের বিরুদ্ধে সতর্কতা জানিয়ে আসছে এবং আন্দোলনকারী নারীরা এটি মানতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন।
মন্তব্য করুন