দুই দশকের বেশি সময় ধরা চলা সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ সকারের পতন হয়েছে। বিদ্রোহীদের অভিযানের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন তিনি। এরপর থেকে দেশটিতে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাশার আল-আসাদ সরকারের নাটকীয় পতনের পর জেরুজালেম শত্রুপক্ষের হাতে পড়তে পারে এমন অস্ত্রকে লক্ষ্য করে সোমবার সিরিয়ায় ইসরায়েল বিমান হামলা চালিয়েছে। সোমবার সিরিয়ার দুটি নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, সিরিয়ার সেনাবাহিনীর অন্তত তিনটি প্রধান বিমানঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ঘাঁটিগুলোতে সিরিয়িার কয়েক ডজন হেলিকপ্টার এবং জেট বিমান রয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কামিশলি বিমানঘাঁটি, হোমসের গ্রামাঞ্চলে শিনশার ঘাঁটি এবং রাজধানী দামেস্কের দক্ষিণ-পশ্চিমে আকরবা বিমানবন্দরে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বিমানবাহিনী উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র মজুদকেন্দ্র, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, অস্ত্র উৎপাদন ব্যবস্থা এবং রাসায়নিক অস্ত্রের সাইটগুলোতে হামলা চালিয়েছে। এসব এলাকায় আসাদ সরকারের সামরিক বাহিনীর বিমান, হেলিকপ্টার এবং ট্যাঙ্কও ছিল।
টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, ধারণা করা হচ্ছে, সিরিয়ার সামরিক অবস্থানকে নিশানা করে ২৫০টির মতো হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, পশ্চিমা গোয়েন্দা সূত্রের তথ্যমতে, সিরিয়ার সামরিক অবস্থানকে নিশানা করে প্রায় ৩০০ হামলা চালানো হয়েছে। ইসরায়েল এ হামলা অব্যাহত রাখলে কয়েক দিনের মধ্যে সিরিয়ার বিমান বাহিনী ধ্বংস হয়ে যাবে। বিদ্রোহী গোষ্ঠী এবং ভবিষ্যতের কোনো সরকার যাতে ইসরায়েলকে আকাশপথে হুমকি দিতে না পারে তা নিশ্চিত করতে এ হামলা চালানো হয়েছে।
ব্রিটেনভিত্তিক যুদ্ধ পর্যবেক্ষক সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছে, ইসরায়েল সোমবার সিরিয়ায় সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ১০০ টিরও বেশি বিমান হামলা চালিয়েছে। এতে একটি গবেষণা কেন্দ্রকেও নিশানা করা হয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো সিরিয়ার বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহ করছে।
উল্লেখ্য, বাবা হাফিজ আল বাশাদের মৃত্যুর পর ২০০০ সালে বাশার আল আসাদের শাসনকাল শুরু হয়। প্রথমে সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিলেও পরবর্তী সময়ে বাবার মতোই কর্তৃত্ববাদী শাসক হয়ে ওঠেন তিনি। বাশার আসাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বিরোধীদের ওপর দমনপীড়নের। এর আগে ২০১১ সালে আরব বসন্ত ঘিরে বাশার আসাদের ক্ষমতার মসনদ নড়ে উঠেছিল।
কিন্তু সে যাত্রায় রাশিয়া ও ইরানের সমর্থনে ক্ষমতায় টিকে গিয়েছিলেন বাশার আসাদ। এবার অবশ্য শেষরক্ষা হয়নি। রাশিয়া ও ইরান আগেই তাদের সামরিক উপস্থিতি কমিয়ে ফেলে। এরপরই হায়াত তাহরির আল শামের নেতৃত্বে বিদ্রোহীদের গ্রুপ মাত্র ৩টি শহর দখল করে নেওয়ার পরই দেশ ছেড়ে পালাতে হয় বাশার আসাদকে। গোপনে প্লেনে চড়ে ছাড়তে হয় মাতৃভূমিও।
মন্তব্য করুন