৫৩ বছর পর নতুন সকাল দেখছেন সিরিয়ার নাগরিকরা। পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে চলা আসাদ পরিবারের শাসন সিরিয়ায় শেষ হয়েছে। ফলে এমন সকাল অনেক সিরিয়ানের কাছে এবারই প্রথম। শুধু সিরিয়ানরাই নয়, আসাদ পরিবারের বাইরে সিরিয়াকে কল্পনা করেননি আঞ্চলিক নেতারাও। এখন সেই বাস্তবতাই সবার চোখের সামনে। যেখানে আছে, দিন বদলের গল্প। তুরস্কের জন্যও বিস্ময় হয়ে এসেছে এমন খবর। বাশার আসাদের সময় ফুরিয়ে এসেছে তা আগেই অনুমান করেছিল আঙ্কারা। তবে তা এত দ্রুত ঘটবে, সেটা বোঝেনি তারা।
রোববার (০৮ ডিসেম্বর) মিডল ইস্ট আইয়ের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানে যখন তালিবানরা দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতাগ্রহণের লড়াই শুরু করে, তখন দেশটির সেনাবাহিনী রীতিমতো অস্ত্র ছেড়ে দিয়েছিল। অত্যাধুনিক মার্কিন অস্ত্র আর প্রশিক্ষণ কোনো কাজেই লাগেনি। রোববার আসাদ সরকারের পতনের সময়ও প্রায় একই দৃশ্য সামনে এলো। সিরীয় বাহিনী একদমই প্রতিরোধ গড়ে তোলেনি। উল্টো বিদ্রোহীদের ভয়ে নিজেদের পোস্ট ছেড়ে পালিয়েছে তারা।
গেল মাসে তুরস্কের আশকারা পেয়ে সীমিত পরিসরে অভিযান শুরু করে বিরোধীঘেঁষা গ্রুপগুলো। তাদের নেতৃত্বে ছিল হায়াত তাহরির আল শাম। মূলত আসাদ সরকার ও ইরানপন্থি মিত্রদের চাপে ফেলতেই এমন কৌশল নিয়েছিল আঙ্কারা। কিন্তু তারা ভাবতেও পারেনি এত দ্রুত পতন ঘটবে আলেপ্পোর। ইদলিব শহরে সিরীয় বাহিনীর অভিযানে বেসামরিক নাগরিকরা নিয়মিতই তুরস্ক সীমান্তে জড়ো হচ্ছিল। তাই অভিযানের অনুমতি দিয়েছিল আঙ্কারা।
সময়টাও একেবারে দারুণ ছিল। ইউক্রেন নিয়ে পুরোপুরি মগ্ন রাশিয়া। আর ইসরায়েলের ওপর নিজেদের পুরো ফোকাস রয়েছে লেবানন ও ইরানের। আবার আমেরিকায়ও আসতে চলেছে নতুন প্রশাসন। সবমিলিয়ে এই সময়ে সীমিত অভিযানের অনুমতি দিয়ে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ তাল রিফাত নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইছিল তুরস্ক। কিন্তু সেই অগুরুত্বপূর্ণ অভিযান এমন রূপ নেয়, তাতেই পতন ঘটে বাশার আসাদের।
দাবার খেলায় আপাতত জয়ী হয়েছে তুরস্ক। সিরিয়ায় এখন সবচেয়ে প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে তারা। অভিযান শুরুর পর থেকেই সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে আসছিল আঙ্কারা। বলছিল সরকার ব্যবস্থা যেন চলমান থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে। তাই দামেস্ক বিজয়ের পর হায়াত তাহরির আল শামের নেতা আহমেদ আল শারা যিনি আবু মোহাম্মদ আল জোলানি নামেই বেশি পরিচিত, তিনিও সরকার ব্যবস্থা অক্ষত রেখেছেন।
মন্তব্য করুন