রোম যখন পুড়ছিল, নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। শাম অঞ্চলের সমৃদ্ধশালী দেশ সিরিয়ায় একই ভূমিকায় দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রকে। দেশটির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থনে সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ সরকারের পতন ঘটেছে। অথচ যুক্তরাষ্ট্র রীতিমতো চোখ বুঝে ছিল।
ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সিরিয়ায় মার্কিন বাহিনী রয়েছে। আছে রুশ, তুরস্ক ও ইরানের বাহিনীও। তারপরও সবার নাকের ডগায় বসেই দামেস্কের মসনদ বাগিয়ে নিয়েছে
ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের আগুন আপাতত নিভে গেছে। লেবাননেও শান্তির প্রক্রিয়া অনেকটাই সম্পন্ন। ঠিক তখনই সিরিয়ায় নজর পড়েছে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের। ইরান সমর্থিত যোদ্ধারা এই সিরিয়া ব্যবহার করেই ইসরায়েলে হামলা চালায়। আবার ইরানও কোনো ধরনের হামলা চালাতে গেলে সিরিয়ার অঞ্চল ব্যবহার করতে হবে। ক্ষমতায় থাকতে, এর সবকিছুই অনুমোদন করেছিলেন বাশার আল আসাদ। নিজে সুন্নি হলেও স্বার্থের খাতিরে শিয়াপন্থি ইরানের সঙ্গে বিরোধ ছিল না তার।
এমন সমীকরণ সামনে রেখে কঠিন এক খেলায় মেতে ওঠে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র। সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের নেতৃত্ব দেওয়া আবু মোহাম্মদ আল-জুলানি এক সময় মার্কিন কারাবন্দি ছিলেন। অথচ সে কারাবন্দিই এখন পুরো সিরিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। তাই এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ত থাকার ষড়যন্ত্র তত্ত্ব একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আবার সিরিয়া অস্থিতিশীল থাকলে মার্কিন তেল ও অস্ত্র ব্যবসার জন্যও সেটা লাভের। আর মিত্র ইসরায়েলের জন্য তো পুরোই আশীর্বাদ।
মূলত ইরানের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে না জড়িয়েও তেহরানকে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া গেল এর মাধ্যমে। তাই সিরিয়ার চলমান এই পরিস্থিতি নিয়ে খুব কৌশলী উত্তরও দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র সন সেভেট বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার টিম পুরো পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। এমনকি সেখানে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে যোগাযোগও রেখে চলছে ওয়াশিংটন।
বাপ-বেটা মিলে সিরিয়ায় ৫০ বছরের বেশি সময় শাসন করেছে আসাদ পরিবার। কিন্তু সেই শাসনের অবসান ঘটতে লেগেছে মাত্র কয়েক ঘণ্টা। এক সপ্তাহের বেশি সময় আগে শুরু হওয়া বিদ্রোহীদের অভিযান এত দ্রুত শেষ হয়ে যাবে, বাশার আসাদ তা কল্পনাও করতে পারেননি। তাই আকস্মিক এ ঘটনায় অপ্রস্তুত বাশার আসাদ গোপনে দেশ ছেড়েছেন।
বাশার আল-আসাদ বিমানে করে কোথায় পাড়ি দিয়েছেন, তা কারো জানা নেই। দেশকে এমন অনিশ্চয়তার সাগরে ফেলে বাশার আসাদ উড়াল দিলেও হাল ধরেছেন সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ গাজি জলিলি।
মন্তব্য করুন