বিদ্রোহীদের অভিযানের মুখে ব্যক্তিগত বিমানে রাজধানী দামেস্ক ছেড়েছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। রোববার সকালে জানা যায় এমন খবর। এর আগে বিদ্রোহীরা দামেস্কে ঢুকে পড়ার কথা জানায়। তাদের অগ্রগতি থামাতে ব্যর্থ হয়ে আত্মসমর্পণ করে অসহায় সিরীয় বাহিনী। উপায় না দেখে পালিয়ে যান বাশার আসাদও।
এতে রাতারাতি বদলে যায় সিরিয়ার চিত্র। বিদ্রোহীদের দখলে এখন রাজধানীসহ সিরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল। বাশার আল আসাদের পতনের পর সিরিয়াকে মুক্ত ঘোষণা করেছে বিদ্রোহীরা। হায়াত তাহরির আল শামের নেতৃত্বে বিদ্রোহীদের গ্রুপগুলো মাত্র ৩টি শহর দখল করে নেওয়ার পরই পালিয়ে যান বাশার আসাদ।
সিরিয়া এখনো একটি বিভক্ত দেশ, বছরের পর বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের গভীর ক্ষত এখনো দগদগে। গত চার বছর ধরে যে অচলাবস্থা এবং স্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছিল, তা মাত্র দেড় সপ্তাহ আগে পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। বিদ্রোহীরা হঠাৎ করেই ভয়ানক অভিযান শুরু করে, ফলে আসাদ বাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। আরব নেতাদের মধ্যে একঘরে থাকার অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলেন আসাদ। তবে যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে সিরিয়ার জনগণের জন্য একটি কার্যকর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার কোনো অগ্রগতি হয়নি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার পতনের পর কে শাসন করবেন সিরিয়া।
সিরিয়ার ক্ষমতায় শূন্যতা কীভাবে পূরণ হবে? যদিও তা এখনো তা অস্পষ্ট। কারণ বিরোধী গোষ্ঠীগুলো ঐক্যবদ্ধ নয় এবং তাদের মধ্যে পূর্বের বিভেদ এবং আন্তঃকলহ রয়েছে। যে গোষ্ঠী নতুন বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিচ্ছে, তাদের ভিত্তি আল কায়েদার উগ্রবাদ। তাদের নেতা অন্যান্য সম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন, তারা তাদের মতাদর্শ চাপিয়ে দেবেন না। তবে মানুষ স্বভাবতই উদ্বিগ্ন যে সামনে কী ঘটতে যাচ্ছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সিরিয়া আরও বিপর্যস্ত অবস্থায় পড়ে যেতে পারে। কারণ সেখানে বিভিন্ন গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য একে অপরের সঙ্গে লড়াই করবে। ইতোমধ্যে অত্যন্ত অস্থিতিশীল এবং উত্তেজনাপূর্ণ অঞ্চলে এই পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে।
তবে আপাতত, সিরিয়ার ভেতরে এবং বাইরে থাকা অনেক মানুষ একটি নতুন আশা নিয়ে ঐক্যবদ্ধ। আসাদ এভাবে কোণঠাসা হবেন এটি তারা কখনো ভাবেননি। তারা এখন বিশ্বাস করছেন, এবার নিজ বাড়িতে ফিরে যেতে পারবেন।
এদিকে, দামেস্ক ছেড়ে বাশার আল আসাদ কোথায় গেছে তা নিয়েও নানা মহলে নানা গুঞ্জন রয়েছে। দামেস্ক থেকে উড্ডয়ন এবং অবতরণের ফ্লাইট পর্যবেক্ষণ করে অনেকেই বোঝার চেষ্টা করছেন তিনি দেশ ছেড়েছেন কিনা। তার দপ্তর এই ধরনের সব প্রতিবেদন অস্বীকার করেছে এবং জানিয়েছে তিনি এখনো দামেস্কেই আছেন। তবে তার কোনো প্রকাশ্য উপস্থিতি দেখা যায়নি। এর আগে গত শুক্রবার দামেস্কে আসাদের সঙ্গে দেখা করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির একজন উপদেষ্টা। প্রেস টিভির খবরে বলা হয়, উপদেষ্টা আলি লারিজানি আসাদকে ইরানের সমর্থন জানাতে সাক্ষাৎ করেছেন।
অনেকে ধারণা করছেন, আসাদ শেষ পর্যন্ত ইরানের আশ্রয় নিতে পারেন। আসাদের আরেক মিত্র রাশিয়া এখনো তার অবস্থান বা সিরিয়ার সর্বশেষ সার্বিক পরিস্থিতিতে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। আসাদ দেশ ছাড়লে ইরান বা রাশিয়াতে আশ্রয় নিতে পারেন বলেই ধারণা করছেন পর্যবেক্ষকরা।
মন্তব্য করুন