কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০৩ এএম
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫১ এএম
অনলাইন সংস্করণ

বাশার আল-আসাদ : যুবরাজ থেকে স্বৈরশাসক, শেষে করুণ পরিণতি

সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট হাফেজ আল-আসাদের দ্বিতীয় সন্তান বাশার আল আসাদ। (বাঁ থেকে দ্বিতীয়) ছবি : সংগৃহীত
সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট হাফেজ আল-আসাদের দ্বিতীয় সন্তান বাশার আল আসাদ। (বাঁ থেকে দ্বিতীয়) ছবি : সংগৃহীত

সিরিয়ার স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের জীবন এক নাটকীয় উত্থান ও পতনের কাহিনি। ক্ষমতার উত্তরাধিকার হিসেবে রাজনীতিতে প্রবেশ করা এই ব্যক্তি একসময় সংস্কারের প্রতীক হিসেবে দেখা দিয়েছিলেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে তিনি হয়ে ওঠেন একজন স্বৈরশাসক।

তার শাসনামল চিহ্নিত হয়েছে গৃহযুদ্ধ, গণহত্যা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য। অবশেষে, বিদ্রোহীদের চাপে এবং আন্তর্জাতিক মিত্রদের দুর্বলতায় তাকে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হতে হয়েছে।

তারুণ্যের স্বপ্ন থেকে রাজনীতির অঙ্গনে প্রবেশ ১৯৬৫ সালে দামেস্কে জন্মগ্রহণ করা বাশার আল-আসাদ সিরিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হাফেজ আল-আসাদের দ্বিতীয় সন্তান। তিনি এক উচ্চবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠেন।

বড় ভাই বাসিল আল-আসাদ ছিলেন পরিবারের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার। বাশার রাজনীতির বাইরে থেকে লন্ডনে চোখের ডাক্তার হিসেবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং মূলত চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন।

তবে ১৯৯৪ সালে বড় ভাই বাসিলের সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পর বাশার পরিবারের দায়িত্ব নিতে বাধ্য হন। বাবার নির্দেশে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং রাজনীতির প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন।

ক্ষমতার সিঁড়ি বেয়ে শীর্ষে ওঠা ২০০০ সালে তার বাবা হাফেজ আল-আসাদের মৃত্যুর পর মাত্র ৩৪ বছর বয়সে বাশার সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হন। সেই সময় তাকে তরুণ এবং সংস্কারপন্থি নেতা হিসেবে দেখা হয়েছিল। সিরিয়ার জনগণ আশাবাদী ছিল, তিনি দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবেন।

কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর বাশার দ্রুতই তার পিতার শাসন কাঠামোকে আরো কঠোর করে তোলেন। রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন, মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ এবং সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য তিনি সমালোচিত হন।

আরব বসন্ত এবং গৃহযুদ্ধের সূচনা ২০১১ সালে আরব বসন্তের ঢেউ সিরিয়ায় পৌঁছলে, বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং মুক্তির দাবিতে সৃষ্ট এই আন্দোলনগুলো বাশারের শাসনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।

তবে, তিনি সংলাপের পরিবর্তে কঠোর দমননীতি গ্রহণ করেন। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর সামরিক অভিযান, বোমাবর্ষণ এবং রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের কারণে দেশটি ধীরে ধীরে গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে।

গৃহযুদ্ধে লাখো মানুষের মৃত্যু এবং কোটি মানুষের উদ্বাস্তু হওয়ার জন্য বাশারকে দায়ী করা হয়। তার শাসনব্যবস্থা রাশিয়া ও ইরানের সমর্থন পেলেও আন্তর্জাতিক মহল তাকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত করেছে।

পতনের শুরু ২০২৪ সালে বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)-এর নেতৃত্বে বিদ্রোহীরা সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। আলেপ্পো, হোমস, এবং হামার মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো দখল করে তারা বাশারের সেনাবাহিনীকে পিছু হটতে বাধ্য করে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিদ্রোহীদের দ্রুত অগ্রগতির পেছনে আসাদ বাহিনীর দুর্বল প্রতিরোধ এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে বিভাজন বড় কারণ। ইরান ও রাশিয়া, যারা এতদিন বাশারকে সমর্থন দিয়ে আসছিল, তারাও সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে আর আগ্রহ দেখায়নি।

শেষ পরিণতি : দেশত্যাগ বিদ্রোহীরা দামেস্ক ঘিরে ফেললে পরিস্থিতি বাশারের জন্য আরও সংকটজনক হয়ে ওঠে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, দামেস্কে বিদ্রোহীদের অগ্রযাত্রা শুরু হলে বাশার আল-আসাদ একটি ব্যক্তিগত উড়োজাহাজে দেশ ছেড়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে যান।

সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানায়, আসাদের সেনা সদস্যদের সামরিক ইউনিফর্ম খুলে ফেলে পালাতে দেখা গেছে। বিদ্রোহীদের হাতে পতনের আশঙ্কায় সরকারি কর্মকর্তাদের অনেকেই নিরাপত্তার জন্য গোপনে দেশ ছেড়ে চলে যান।

যুবরাজ থেকে স্বৈরশাসক হয়ে ওঠার বাশার আল-আসাদের গল্প ক্ষমতা এবং দমননীতির এক দুঃখজনক উদাহরণ। তার শাসনামল সিরিয়ার জনগণের জন্য বিভীষিকা হয়ে দাঁড়ায়। দেশত্যাগের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক অধ্যায়ের অবসান হলেও, সিরিয়ার জনগণকে এখনও যুদ্ধের ক্ষত এবং পুনর্গঠনের দীর্ঘ পথে এগোতে হবে।

ইতিহাসে বাশার আল-আসাদ একজন ক্ষমতালোভী শাসক হিসেবে পরিচিত হয়ে থাকবেন, যিনি তার দেশ এবং জনগণের চেয়ে নিজের ক্ষমতাকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছিলেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

লিড নিয়ে দ্বিতীয় সেশন শেষ জিম্বাবুয়ের

মৃত্যুর আগে ‘গাজায় যুদ্ধবিরতি’ চেয়েছিলেন পোপ ফ্রান্সিস

সিপিডির গবেষণা / ২০২৩ সালে কর ফাঁকিতে রাজস্ব ক্ষতি ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা

রেহান-পলিনের ‘টুকরো চোখ’

পোপ ফ্রান্সিস আর নেই

হঠাৎ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি নাগরিকদের প্রবেশের চেষ্টা

মাস্ক-হেলমেট পরে সোনারগাঁয়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের মিছিল

নাসুমকে হাথুরুর থাপ্পড় দেওয়া নিয়ে যা বললেন হেরাথ-পোথাস

আল-আকসা ভেঙে থার্ড টেম্পল নির্মাণের প্রচারণায় ইসরায়েল

তিন পুলিশ সুপার বদলি

১০

সন্তান না হওয়ায় গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ

১১

এ কোন সাদিয়া আয়মান, ভাইরাল ছবির নেপথ্যে কে?

১২

চানখারপুলে গণহত্যা / সাবেক ডিএমপি কমিশনারসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল 

১৩

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট পুনর্গঠনের দাবি এবি পার্টির

১৪

নতুন রেকর্ড গড়ার পথে শাকিবের ‘বরবাদ’ (ভিডিও)

১৫

খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফের আস্তানার সন্ধান, মিলল সামরিক ইউনিফর্ম

১৬

বজ্রপাতে প্রাণ গেল বিএনপি নেতার

১৭

দরিদ্র শামছুল হকের মেয়ের বিয়ে সম্পন্ন, সার্বিক সহযোগিতায় তারেক রহমান

১৮

দিনাজপুরে ছাত্র আন্দোলনে হামলা, আ.লীগ-যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

১৯

লাইফ সাপোর্টে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক, দোয়া চাইলেন জামায়াত আমির

২০
X