মধ্যপ্রাচ্যে ইরান নেতৃত্বাধীন প্রতিরোধ অক্ষকে শক্তিশালী করতে একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করে আসছে সিরিয়া। বাশার আসাদ সরকার শুরু থেকেই হিজবুল্লাহসহ প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর বড় সমর্থক। আর এই গোষ্ঠীগুলোর অন্যতম উদ্দেশ্য হলো- ইসরায়েলসহ পশ্চিমা আধিপত্ত শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এবং ফিলিস্তিনকে মুক্ত করা।
প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ একটি দেশ সিরিয়া। একপাশে ভূমধ্যসাগর, অন্যপাশে ইরাক, উত্তরাংশজুড়ে তুরস্কের অবস্থাস, ইসরায়েল, লেবানন ও জর্দানের সঙ্গে রয়েছে সীমানা। সবমিলে মধ্যপ্রাচ্যে ভৌগোলিক অবস্থানের দিক দিয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ সভ্যতা ও সাংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র এই দেশটি।
পৃথিবীর মধ্যভাগ বলে পরিচিত এই এই অঞ্চলে প্রভাব বজায় রাখতে যে কোনো শক্তির জন্য সিরিয়ার সমর্থন জরুরি। তাই পশ্চিমা এবং পশ্চিমাবিরোধী উভয়পক্ষই চায় সিরিয়ায় এমন একটি সরকার থাকুক যার সমর্থন পাওয়া যাবে। বাশার আসাদ সরকার যেহেতু ইরানপন্থি জোটে যুক্ত হয়েছেন তাই যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলসহ পশ্চিমা শক্তি যেকোনো মূল্যে আসাদকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চায়।
২০১২ সালে বাশার আল-আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হয়। দামেস্কের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের প্রত্যক্ষ মদদেই এই বিদ্রোহ শুরু হয়। তবে পশ্চিম থেকে সামরিক-আর্থিক সব ধরনের সহায়তা পেয়েও বিদ্রোহীরা আসাদ সরকারের পতন ঘটাতে পারেনি। রাশিয়া এবং ইরানের সহযোগিতায় ক্ষমতায় টিকে যান বাশার।
সিরিয়া হিজবুল্লাহ ও ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনগুলোর মূল সমর্থক হিসেবে কাজ করে আসছে। এই সহায়তার মধ্যে অন্যতম হলো অস্ত্র এবং সম্পদ হস্তান্তরের ব্যবস্থা করা।
লজিস্টিক ভূমিকা ছাড়াও সিরিয়া আলেপ্পো শহরে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা কেন্দ্রগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে যার মাধ্যমে বৃহত্তর প্রতিরোধ নেটওয়ার্কের কৌশলগত গুরুত্ব নির্দেশ করে। পশ্চিমা-সমর্থিত প্রক্সি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সিরিয়াও একটি ফ্রন্টলাইন দেশ। এই প্রক্সি বাহিনীর লক্ষ্য আলেপ্পোকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং দামেস্কে বাশার আল-আসাদের নির্বাচিত সরকারকে দুর্বল করা।
একটি লজিস্টিক হাব হিসাবে সিরিয়ার দ্বৈত ভূমিকা এবং অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করার বিদেশী প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করার জন্য দামেস্ক সরকারের অবস্থান প্রতিরোধ অক্ষের মাঝে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করে।
সিরিয়ার অস্ত্র গুদাম যার মধ্যে অভ্যন্তরীণভাবে উৎপাদিত অস্ত্রের পাশাপাশি অন্যান্য দেশ থেকে সংগ্রহ করা অস্ত্রও রয়েছে। সেগুলো লেবাননে হিজবুল্লাহকেও সরবরাহ করা হয়। হিজবুল্লাহর কাছে অস্ত্র সাপ্লাইয়ে অন্যতম ভূমিকা রাখে দামেষ্ক। তাই ইসরায়েল যেকোনো সিরিয়াকে অস্থিতিশীল রাখতে চাইছে।
গত দশকে সিরিয়ার গবেষণা এবং বৈজ্ঞানিক কেন্দ্রগুলো বারবার শত্রুদের আক্রমণের শিকার হয়েছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে এই আক্রমণগুলো তীব্র হয়েছে এবং সিরিয়ার সামরিক অবকাঠামো ভেঙে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। একদিকে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ত, অন্যদিকে ইরানের মনোযোগ হামাস ও হিজবুল্লাহকে ঘিরে। ফলে তারা বাশার আল-আসাদের পাশে পূর্ণ শক্তি নিয়ে দাড়াতে পারছে না।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এই সুযোগটাকে কাজে লাগাতে চাইছে। তারা বিদ্রোহীদের সামরিক সহায়তা দিচ্ছে এবং আলেপ্পোসহ অন্যান্য শহরগুলোতে তাদের এগিয়ে যেতে সমর্থন দিচ্ছে। তারা চাইছে বাশার সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে ইরান নেতৃত্বাধীন প্রতিরোধ নেটওয়ার্ককে ভেঙে দিতে।
মন্তব্য করুন