লেবাননের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলেও গাজায় এখনও দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যায়নি। ফলে ইসরায়েলিদের চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে। বিভিন্ন সময় তার কার্যালয়ও অবরোধ করেছে বিক্ষুদ্ধ নাগরিকরা। এমন পরিস্থিতির মধ্যে পদত্যাগের ইংগিত দিয়েছেন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারজি হালেভি।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) টাইমস অব ইসরায়েলের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার আইডিএফ প্রধান ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তিনি পদত্যাগ করতে চলেছেন। সেনাবাহিনী গত বছরের ৭ অক্টোবরের হামলার তদন্ত শেষ করার পরে তিনি পদত্যাগ করতে পারেন।
তিনি লিখেন, তদন্ত শেষে আমরা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তও নেব এবং কমান্ডাররা স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। তদন্তে পুরো বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে যাবে। আমার কোনোকিছু এড়িয়ে যাওয়ার ইচ্ছা নেই।
এর আগে গত জুলাই পদত্যাগের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তার কাজ শেষ হওয়ার পর তিনি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
ওই সময়ে হালেভি বলেন, আমি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমার দায়িত্ব প্রকাশ করেছি। আমার এসব শব্দ ব্যবহারের একটি অর্থ রয়েছে। বিষয়গুলো আমার কাছে পুরোপুরি স্পষ্ট। আমি আমার কাজগুলো মাঝপথে ছেড়ে দিব না। আমার কাজগুলো শেষ হওয়ার পর আমি নিজের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।
হালেভি ২০২৩ সালের শুরু থেকে আইডিএফের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। গত ৭ অক্টোবরের হামলার এবং চলাকালে তিনি দায়িত্বে ছিলেন। এ সময় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীদের সংগঠন হামাসের হামলায় ইসরায়েলের প্রায় ১২০০ সেনা নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া এ সময় আরও অন্তত ২৫১ জনকে জিম্মি করেছে তারা।
অন্যদিকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৪৪ হাজার ৩৬৩ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৭ হাজার ৪৯২ জন শিশু রয়েছেন। এখনও অন্তত ১১ হাজারের বেশি লোক নিখোঁজ রয়েছেন। অন্যদিকে এ হামলায় এক লাখ পাঁচ হাজার ৭০ জন আহত হয়েছেন।
গত এক বছরের বেশি সময় ধরে গাজায় হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। দেশটির অব্যাহত এ হামলায় সৃষ্ট ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করতে অন্তত ১৫ বছর সময় লাগবে। এজন্য প্রতিদিন ১০০টি লরি ব্যবহার করতে হবে।
জাতিসংঘের হিসাবমতে, গাজায় ভবন ধসে এ পর্যন্ত ৪২ মিলিয়ন টনেরও বেশি ধ্বংসস্তূপ জমা হয়েছে। এ ধ্বংসস্তূপগুলো যদি একসঙ্গে এক জায়গায় রাখা যায়, তাহলে তা মিশরের ১১টি গ্রেট পিরামিডের সমান হবে। এ ধ্বংসস্তূপ সরাতে ব্যয় হবে ৫০০ থেকে ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি)।
ইউএন এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামের হিসাব অনুসারে, গাজায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৭টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা অঞ্চলটির মোট ভবনের অর্ধেকের বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এ ছাড়া এক-দশমাংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এক-তৃতীয়াংশ বেশ খানিকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ভবনের ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ফেলার জন্য ২৫০ থেকে ৫০০ হেক্টর জমির প্রয়োজন পড়বে।
গাজাভিত্তিক জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘অবকাঠামোর যে পরিমাণ ক্ষতি করা হয়েছে, তা পাগলামির পর্যায়ে পড়ে, দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে একটি ভবনও নেই যেখানে ইসরায়েল হামলা চালায়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত অর্থেই এ অঞ্চলের ভৌগোলিক চিত্র পরিবর্তিত হয়ে গেছে। যেখানে আগে পাহাড় ছিল না, এখন সেখানে পাহাড় হয়ে গেছে। দুই হাজার পাউন্ডের বোমাগুলো আক্ষরিক অর্থেই এ অঞ্চলের মানচিত্র বদলে দিয়েছে।’
মন্তব্য করুন