ইসরায়েলের কট্টরপন্থি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মট্রিচ গাজা উপত্যকা নিয়ে ভয়ানক এক প্রস্তাব দিয়েছেন, যেখানে তিনি গাজার ফিলিস্তিনি জনসংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনার পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেছেন। স্মট্রিচের মতে, গাজার দখল নেওয়ার পর সেখানে স্বেচ্ছামূলক অভিবাসনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি জনসংখ্যা কমিয়ে আনা উচিত।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) রাতে ওয়েস্ট ব্যাংকের ইহুদি বসতি সংগঠন ইয়েশা কাউন্সিল আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেন স্মট্রিচ। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্মট্রিচ দাবি করেছেন, গাজা দখল করা আমাদের জন্য সম্ভব এবং অবশ্যই তা করা উচিত। এতে আমাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
তিনি আরও বলেন, গাজায় স্বেচ্ছামূলক অভিবাসনের মাধ্যমে জনসংখ্যা হ্রাসের একটি অনন্য সুযোগ এসেছে, বিশেষত নতুন প্রশাসনের সঙ্গে এটি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। তার মতে, দুই বছরের মধ্যে গাজার জনসংখ্যা অর্ধেকে নামানো সম্ভব।
এদিকে, কট্টর ডানপন্থি এই নেতার মন্তব্য নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। স্মট্রিচ তার নানা বিতর্কিত বক্তব্যের জন্য ইতোমধ্যে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন। বিশেষ করে ১৪ নভেম্বর, মার্কিন মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ হিসেবে অভিহিত করেছে।
সংগঠনটি জানায়, গাজায় ব্যাপক জনসংখ্যা স্থানান্তর জাতিগত নির্মূলের সংজ্ঞায় পড়ে। যদিও ইসরায়েল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান জোসেপ বোরেলও গাজায় চলমান পরিস্থিতিকে ‘জাতিগত নির্মূল’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এর আগে, স্মট্রিচ ও জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গভির গাজার ২৪ লাখ মানুষের জন্য ‘স্বেচ্ছামূলক স্থানান্তর’ পরিকল্পনা প্রকাশ করেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র তাদের মন্তব্যকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে নিন্দা জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সালে গাজা দখলের পর, ইসরায়েল ২০০৫ সাল পর্যন্ত সেখানে সেনা এবং বসতি স্থাপন করে, কিন্তু পরবর্তীতে সেনা প্রত্যাহার করলেও গাজার ওপর অবরোধ বজায় রাখে। ২০০৭ সালে হামাস গাজায় ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ইসরায়েলি সরকারের সঙ্গে তাদের বিরোধ তীব্র হয়ে ওঠে।
গাজায় চলমান সংঘাতে ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক আক্রমণে ১ হাজার ২০৭ জন নিহত হয়, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। পাল্টা আক্রমণে, এখন পর্যন্ত গাজার ৪৪ হাজার ২৪৯ জন নিহত হয়েছে, এই পরিসংখ্যান হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হয়েছে এবং জাতিসংঘও এই পরিসংখ্যানকে নির্ভরযোগ্য বলে মনে করে।
বেজালেল স্মট্রিচের এমন মন্তব্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে এবং এর ফলে ফিলিস্তিনি জনগণের নিরাপত্তা ও অস্তিত্বের ওপর আরও গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
মন্তব্য করুন