মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে বাজছে যুদ্ধের দামামা। গাজায় এক বছরের বেশি সময় ধরে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। এছাড়া সম্প্রতি লেবাননেও স্থল অভিযান শুরু করেছে তারা। এবার ইসরায়েলে শত শত রকেট ও প্রজেক্টাইল নিক্ষেপ করেছে লেবাননের প্রতিরোধ যোদ্ধা হিজবুল্লাহ।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের প্রাণকেন্দ্রসহ তিন শহরে রকেট হামলা চালিয়েছে হিজবুল্লাহ। এ তিন শহর জলো পেতাহ টিকভা, নাহারিয়া ও হাইফা। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর তথ্যানুসারে, লেবানন থেকে ইসরায়েলে শত শত রকেট ও প্রজেক্টাইল ছোড়া হয়েছে।
আলজাজিরা জানিয়েছে, হিজবুল্লাহর এ হামলায় দুটি সামরিক স্থাপনাসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। হামলার ফলে গাড়িতে আগুন লেগে গেছে এবং ভবনে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
লেবানন থেকে চালানো এ হামলায় স্থানীয় জনবহুল এলাকার বেশিরভাগ বাসিন্দারা আশ্রয়কেন্দ্র ও সেফ রুমে আশ্রয় নিয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সব রকেটকে আটকাতে পারেনি। আহতদের অনেককে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর।
হিজবুল্লাহর চালানো এসব রকেট রাতে আঘাত হেনেছে। অধিকৃত পশ্চিম তীরের তুলকারিম শরণার্থী শিবিরেও এ সময় শার্পনেল ছিটকে পড়েছে। এলাকাটিতে ইসরায়েলের কোনো আশ্রয়কেন্দ্র বা সাইরেন ব্যবস্থা নেই।
বিবিসির এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে মধ্যপ্রাচ্য। গত এক বছরে বিশ্বে অনেক বিপদের মুহূর্ত এসেছে। তবে এবারেরটি সবচেয়ে ভয়াবহ। সম্প্রতি লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হয়েছেন। এরপর লেবাননে স্থল হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। অন্যদিকে ইরান প্রায় ২০০ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে ইসরায়েলে। তেহরানে পাল্টা হামলা চালানোর ঘোষণা দিয়েছে তেলআবিব।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা ও আঞ্চলিক শক্তিগুলো উত্তেজনা কমানোর জন্য চাপ দিচ্ছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ দ্রুত সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।
শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭ এর পক্ষ থেকে সব পক্ষকে ধৈর্য ধরতে বলা হয়েছে; কিন্তু এখন পর্যন্ত সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ। আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে মধ্যপ্রাচ্য সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে। গত এক সপ্তাহে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনার কারণে মূলত এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যায় লেবাননের বৈরুতে গত ২৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ইসরায়েল বোমা হামলা চালায়। সেখানে ব্যাপক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। অনেক আবাসিক ভবন ধসে পড়ে। মাটিতে বড় গর্ত সৃষ্টি হয়। আকাশ ধুলাবালি ও ধোঁয়ায় ভরে ওঠে। পুরো লেবানন থেকে ওই দৃশ্য দেখা যায়। এ হামলা হয় মাটির নিচে থাকা হিজবুল্লাহর বাংকার লক্ষ্য করে। এ হামলায় নিহত হন হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ। ইসরায়েলের এক সপ্তাহ ধরে চালানো হামলায় ৫০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হওয়ার পর নাসরুল্লাহর মৃত্যুর খবর আসে।
তারও এক সপ্তাহ আগে এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটিকে লক্ষ্য করে পর পর অসংখ্য ওয়াকিটকি এবং পেজার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে কমপক্ষে ৩২ জন নিহত এবং তিন হাজার জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছিল।
মন্তব্য করুন