গাজার সঙ্গে লেবাননেও ভয়াবহ হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। দেশটির এ হামলায় একের পর এক প্রাণ হারাচ্ছে নিরীহ এবং বেসামরিক লোকজন। দেশটিতে যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের এ প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে লেবাননের প্রতিরোধ যোদ্ধা হিজবুল্লাহ।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
লেবাননের এক শীর্ষ কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, হিজবুল্লাহ ও লেবানন ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে মার্কিন প্রস্তাবে রাজি হয়েছে। এছাড়া তারা কিছু বিষয়ে মন্তব্য করেছে। যুদ্ধবিরতিতে এখনো পর্যন্ত এটি হলো সবচেয়ে সফল প্রচেষ্টা।
পার্লামেন্টের স্পিকার নাবিহ বেরির সহকারী আলি হাসান খলিল বলেন, লেবানন সোমবার মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তাদের বক্তব্য লিখিত আকারে উপস্থাপন করেছেন। আলোচনা চালিয়ে যেতে হোয়াইট হাউসের দূত আমোস হোচস্টেইন বৈরুতে যাচ্ছেন।
লেবাননের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মতির কথা জানানো হলেও এ বিষয়ে ইসরায়েলের তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
লেবাননের প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহ দীর্ঘদিন ধরে তাদের মিত্র বেরিকে যুদ্ধবিরতির আলোচনার জন্য সমর্থন জানিয়ে আসছেন।
বেরির সহকারী খলিল বলেন, লেবানন ইতিবাচকভাবে লিখিত আকারে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি।
তিনি বলেন, আমরা যে সব মন্তব্য পেশ করেছি তা জাতিসংঘের রেজুলেশনের ১৭০১-এর সব বিধানের সঙ্গে সুনির্দিষ্ট আনুগত্য নিশ্চিত করে।
বিবিসির এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে মধ্যপ্রাচ্য। গত এক বছরে বিশ্বে অনেক বিপদের মুহূর্ত এসেছে। তবে এবারেরটি সবচেয়ে ভয়াবহ। সম্প্রতি লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হয়েছেন। এরপর লেবাননে স্থল হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। অন্যদিকে ইরান প্রায় ২০০ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে ইসরায়েলে। তেহরানে পাল্টা হামলা চালানোর ঘোষণা দিয়েছে তেলআবিব।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা ও আঞ্চলিক শক্তিগুলো উত্তেজনা কমানোর জন্য চাপ দিচ্ছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ দ্রুত সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।
শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭ এর পক্ষ থেকে সব পক্ষকে ধৈর্য ধরতে বলা হয়েছে; কিন্তু এখন পর্যন্ত সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ। আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে মধ্যপ্রাচ্য সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এসব ঘটনার কারণে মূলত এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যায় লেবাননের বৈরুতে গত ২৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ইসরায়েল বোমা হামলা চালায়। সেখানে ব্যাপক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। অনেক আবাসিক ভবন ধসে পড়ে। মাটিতে বড় গর্ত সৃষ্টি হয়। আকাশ ধুলাবালি ও ধোঁয়ায় ভরে ওঠে। পুরো লেবানন থেকে ওই দৃশ্য দেখা যায়। এ হামলা হয় মাটির নিচে থাকা হিজবুল্লাহর বাংকার লক্ষ্য করে। এ হামলায় নিহত হন হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ। ইসরায়েলের এক সপ্তাহ ধরে চালানো হামলায় ৫০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হওয়ার পর নাসরুল্লাহর মৃত্যুর খবর আসে।
তারও এক সপ্তাহ আগে এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটিকে লক্ষ্য করে পর পর অসংখ্য ওয়াকি-টকি এবং পেজার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে কমপক্ষে ৩২ জন নিহত এবং তিন হাজার জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছিল।
মন্তব্য করুন