গাজায় ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। অবরুদ্ধ উপত্যকাটির খান ইউনিসের একটি জনবহুল এলাকায় এ হামলা হয়।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, দিবালোকে একটি জনবহুল এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার সাথে সাথে স্থানীয়রা প্রাণ ভয়ে ছুটাছুটি শুরু করেন।
আল জাজিরাসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ভিডিওটি প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা গেছে, হঠাৎ একটি ক্ষেপণাস্ত্র গাজায় আঘাত হানে। বিস্ফোরণে ভয়ংকর আগুনের ফুলকি তৈরি হয়। চারপাশে ধ্বংসস্তূপ ছিটকে আসতে থাকে। লোকজন প্রাণ বাঁচাতে ছুটাছুটি শুরু করেন। এরই মধ্যে বিস্ফোরণের প্রতিক্রিয়ায় অনেকে মাটিতে পড়ে যান।
ফিলিস্তিনের গাজায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বর্বরতা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের হামলায় এ পর্যন্ত নিহত হয়েছে প্রায় ৪৪ হাজার মানুষ। নিহতদের অর্ধেকেরও বেশি নারী ও শিশু। আহতের সংখ্যাও এক লাখ ছাড়িয়েছে। বোমা হামলায় প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা। প্রাণ বাঁচাতে গাজার সাধারণ মানুষকে চরকির মতো এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ঘুরতে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে গাজায় যা চলছে, তা স্পষ্ট মানবতাবিরোধী অপরাধ। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে ইসরায়েলে গাজায় জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির নির্দেশ দিয়ে বারবার মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। এদিকে গাজায় এক মাসে ইসরায়েলি হামলায় ২০ সহায়তা কর্মী নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ প্রেক্ষাপটে সহায়তা সংস্থাগুলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, আমাদের কাছে যে তথ্যপ্রমাণ আছে, তার ভিত্তিতে সহজেই বলা যায়, গাজায় ইসরায়েল মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। কারণ তাদের বোমা হামলায় গাজায় নিরীহ নিরপরাধ মানুষ মারা যাচ্ছে। গাজা শিশু ও নারীদের একটা গণকবরে পরিণত হয়েছে। বারবার এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে তারা ছিনিমিনি খেলছে। ফিলিস্তিনিরা চরকির মতো এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ঘুরছে। তাদের বেশিরভাগ খেতে পারছে না। এমনকি পানীয় জলের অভাবে তাদের দিন কাটতে হচ্ছে। এটি সম্পূর্ণ মানবতাবিরোধী অপরাধ। আর ইসরায়েল সেটাই করছে।
এদিকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় এক মাসে ২০ সহায়তা কর্মী নিহত হয়েছেন। গত ১০ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত নিহতের এসব ঘটনা ঘটেছে। উপত্যকায় মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত দাতব্য সংস্থাগুলোর বরাতে আলজাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে। নতুন একটি প্রতিবেদনে দাতব্য সংস্থাগুলো বলছে, ইসরায়েলি হামলায় সহায়তা কর্মীরা নিজেদের বাড়িতে ও উদ্বাস্তুদের শরণার্থীশিবিরে কর্মরত অবস্থায় প্রাণ হারিয়েছেন। অনেকে তাদের পরিবারের সদস্য ও স্বজন হারিয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহত ২০ জনের মধ্যে চারজন অক্সফামের একটি অংশীদার প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী ও কর্মী ছিলেন। ১৯ অক্টোবর তারা গাজার খান ইউনিস এলাকার পূর্বাঞ্চলের খুজায় পানি অবকাঠামো মেরামতের কাজ করতে যাওয়ার সময় ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন। গত বছরের অক্টোবরে গাজায় সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। এর পর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৩০০ জনের বেশি সহায়তা কর্মী নিহত হয়েছেন। এ সংখ্যাটি বিশ্বে কোনো একক সংঘাতে সর্বোচ্চ রেকর্ড।
মন্তব্য করুন