গাজা এবং লেবাননে ইসরায়েলের সঙ্গে যে যুদ্ধ চলছে তা মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে হু&শিয়ারি করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। শনিবার তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ কেবল পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ থাকবে না; বরং তা অন্যান্য অঞ্চলেও দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়বে এবং নিরাপত্তাহীনতা ও অস্থিরতা তৈরি করবে।
এদিকে জার্মান সংবাদ মাধ্যম স্পাইগেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পশ্চিমাদের দ্বিমুখী নীতির কঠোর সমালোচনা করেছেন আব্বাস আরাগচি। তিনি বলেন, ইসরায়েলিদের অভিযানে গাজায় ৫০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। জার্মান সরকার এর নিন্দা জানায়নি, মানবাধিকার কাউন্সিলে প্রস্তাব উত্থাপন করেনি, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি। এগুলো সবই তাদের দ্বিমুখী নীতি।
আব্বাস আরাগচি বলেন, যারাই পশ্চিমাদের নীতির বিরুদ্ধে যাবে তারাই সন্ত্রাসী, আর যারা পশ্চিমাদের নীতি অনুসরণ করবে সে ভালো বন্ধু। এটা দ্বিমুখী নীতি এবং ভুল নীতি। এই আচরণ করে ইউরোপ সভ্যতা এবং মানবাধিকারের প্রতীক হতে পারে না।
গত বছরের অক্টোবরে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে ঢুকে এক হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী। এরপর সেদিনই গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ শুরু করে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল। তার ঘর-বাড়ি ধ্বংস করার পাশাপাশি হত্যা করে হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ। এরপর গাজা যুদ্ধ থেকে সামরিক শক্তি লেবাননের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে ইসরায়েল। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে লেবাননে ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে পুরোমাত্রার যুদ্ধ চলছে।
লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর এক জেনারেল নিহত হওয়ার পর গত ১ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ইরান। ওই দিন ইসরায়েলি ভূখণ্ডে দুই শতাধিক রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরানের সামরিক বাহিনী। এই হামলার জবাবে গত ২৬ অক্টোবরে ইরানের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে বিমান চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। পাল্টাপাল্টি এই হামলায় দুই দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তেল আবিব হামলা চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল পাল্টা হামলা না চালাতে ইরানকে সতর্ক করলেও তেহরান কঠোর জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। এবে এক্ষেত্রে তেহরান কৌশলী আচরণ করছে। তারা বলছে, গাজা এবং লেবাননে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি ইরানের প্রতিক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। যদি ইসরায়েলিরা যুদ্ধবিরতি মেনে নেয় এবং এই অঞ্চলের নিপীড়িত ও নিরপরাধ মানুষকে গণহত্যা বন্ধ করে, তাহলে সেটি তেহরানের পাল্টা জবাবের প্রতিক্রিয়ার মাত্রা ও ধরণে প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন- ইরান হুমকি দেওয়ার পর জবাব দিতে দেরি করে ইসরায়েলকে অস্বস্থিতে রেখেছে এবং তাদের পরিকল্পনা ভন্ডুল করে দিয়েছে। কারণ ইসরায়েল চাচ্ছে গাজা লেবানন যুদ্ধ ইরানে টেনে নিয়ে আসতে। কিন্তু তেহরান তাড়াতাড়ি পাল্টা জবাব না দেওয়ায় ইসরায়েল সেই সুযোগ পাচ্ছে না।
মন্তব্য করুন