লেবাননে ইসরায়েলের হামলায় সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ অস্তিত্ব সংকটের মুখে। নিহত হয়েছেন তাদের সাবেক প্রধান হাসান নাসরুল্লাহও। এরপর কিছু দিন অতিবাহিত হওয়ার পর নতুন প্রধান হিসেবে নাইম কাসেমের নাম ঘোষণা করেছে প্রতিরোধ যোদ্ধারা। এবার তাকেও হত্যার হুমকি দিয়েছে ইসরায়েল। বলেছে, তিনি দীর্ঘদিন এ পদে থাকতে পারবেন না।
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, গোষ্ঠীটির নতুন প্রধান হয়েছেন নাইম কাসেম। তিনি এর আগে গোষ্ঠীটির ডেপুটি ছিলেন। তাকে সাবেক প্রধান হাসান নাসরুল্লাহর স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। কাসেম তার ‘হিজবুল্লাহর নীতি ও লক্ষ্যের প্রতি আনুগত্যের কারণে’ এ পদের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন।
এরপরই ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এক্সে (সাবেক টুইটার) নাইমের ছবি যুক্ত করে একটি পোস্ট দেন। তাতে লেখেন, ‘সাময়িক নিয়োগ, দীর্ঘদিনের জন্য নয়।’ মূলত এর মাধ্যমে পূর্বসূরি নাসরুল্লাহর পরিণতি ভোগ করার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সরকারের দাপ্তরিক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে বলা হয়, ‘নাইম যদি তার পূর্বসূরিদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেন, তাহলে হিজবুল্লাহপ্রধান হিসেবে তার মেয়াদ সংগঠনটির ইতিহাসে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত হতে পারে।’ লেবাননে হিজবুল্লাহর সামরিক সক্ষমতাকে ধ্বংস করা ছাড়া আর কোনো সমাধান নেই বলেও পোস্টে বলা হয়।
৭১ বছর বয়সী হিজবুল্লাহর এ নেতা এর আগে দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ১৯৮০-এর দশকের গোড়ার দিকে গোষ্ঠীটির প্রতিষ্ঠাতা ধর্মীয় পণ্ডিতদের একজন।
লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে নাবাতিয়েহ শহরের কিফার কিলা গ্রামে নাইম কাসেম জন্মগ্রহণ করেন। ওই গ্রামে গত অক্টোবর থেকে শুরু করে অসংখ্যবার হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। শিয়া রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন জড়িত নাঈম কাশেম।
১৯৭০-এর দশকে তিনি প্রয়াত ইমাম মুসা আল-সাদরের দল ‘বঞ্চিতদের আন্দোলনে’ যোগ দেন। পরে দলটি লেবাননের শিয়া দল ‘আমাল আন্দোলনের’ সঙ্গে যুক্ত হয়। এরপর আমাল ছেড়ে তিনি ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে হিজবুল্লাহ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন। তিনি দলটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও ধর্মীয় গুরু হিসেবে যোগ দেন। কাশেমের অন্যতম ধর্মীয় শিক্ষক ছিলেন মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ সম্মানের অধিকারী আয়াতুল্লাহ মোহাম্মাদ হুসেইন ফাদলাল্লাহ। পরে কাশেম নিজেও বেশ কয়েক দশক বৈরুতে ধর্ম শিক্ষার ক্লাস নিয়েছেন।
নাইম কাসেম ১৯৯১ সালে হিজবুল্লাহর উপপ্রধান নিযুক্ত হন। তৎকালীন প্রধান আব্বাস আল মুসাওয়ি তাকে এ পদে নিযুক্ত করেন। এর এক বছর পর ইসরায়েলি হেলিকপ্টার হামলায় নিহত হন।
মুসাওয়ি নিহত হওয়ার পর হাসান নাসরুল্লাহ হিজবুল্লাহর প্রধান নির্বাচিত হন। এরপর থেকে উপপ্রধানের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন নাইম কাসেম। গত এক বছর ধরে তিনি গোষ্ঠীটির অন্যতম মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। বিভিন্ন মিডিয়ায় তিনিই কথা বলে থাকেন।
মন্তব্য করুন